বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধভাবে রাতের ভোটে ক্ষমতা দখল করেছে। তারা ক্ষমতা দখল করেই জনগণের অধিকার হরণ করে এদেশে স্বৈরশাসন কয়েম করেছে। এমতাবস্থায় জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন ও সংগ্রাম করে যাচ্ছি। অতীতেও আমরা স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এবারেও আমরা আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাআল্লাহ। জনগণের এখন একটাই দাবি, স্বৈরাচার সরকারের পতন। ফলে এই এক দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঈদুল আজহার পরে দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আন্দোলনকে চুড়ান্ত পরিনতির দিকে নিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। তারই জন্য আজকের সমাবেশ। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আমরা যতদিন বেঁচে আছি কোন স্বৈরাচারে শাসন আমরা মেনে নেবনা। এই স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার নাটক সাজিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা নিজামীসহ শীর্ষ নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে হত্যা করেছে। ফলে তাদের সাথে আপোষ করার তো কোন প্রশ্নই আসেনা। তিনি দেশবাসীকে ঈদুল আজহা পরবর্তী আন্দোলন সংগ্রামের জন্য চুড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানান।
তিনি আজ ২৫ জুন রবিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ সকল নেতাকর্মী ও আলেম ওলামাদের মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে দেলওয়ার হোসেন ও কামাল হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশে আজ বিচারক আছে, আদালত আছে তবে ন্যায়বিচার নাই, আইনের শাসন নাই। আইনের শাসন থাকলে অনেক আগেই জামায়াতের বর্তমান শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও আলেম ওলামারা মুক্তি পেয়ে যেত। উচ্চ আদালত জামিন দেয় কিন্তু তা কার্যকর হয় না। জামিনের কাগজ পাওয়ার পরেও জেলখানা থেকে মুক্তি না দিয়ে তাদের আবার নতুন করে মামলা দিয়ে ন্যাক্কারজনক ভাবে আটক রাখা হচ্ছে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সহ অসংখ্য ব্যক্তিবর্গ এই অবিচার ও নির্মমতার শিকার হচ্ছে। সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিলো সরকার তাকে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে। তাহলে এই সব বিচারকের কোন মূল্যই বর্তমান সরকারের কাছে নেই তা তাদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ হচ্ছে। আমরা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সেলিম উদ্দিন, শাহজাহান চৌধুরী, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল খালেক সহ সকল নেতাকর্মীদের এবং আলেম ওলামাদের মুক্তির দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, জনগণের কথা বলার অধিকার নেই, এমনকি মানুষের জান ও মালেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের দলীয় ক্যাডার বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে জনগণের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। গায়েবী মামলা দিয়ে দেশের জনগণকে অপরাধী বানানো হচ্ছে। দেশের সম্পদ ও মুদ্রা পাচার, ঋন কেলেংকারী, ব্যাংক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। সরকার তার সামগ্রিক ব্যর্থতায় দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। এমতাবস্থায় জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা) প্রদর্শিত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ইসলাম। শুধুমাত্র ইসলামই জনগণকে তার প্রকৃত নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এমতাবস্থায় দেশের মানুষের মুক্তির জন্য ইসলামের সু-মহান আদর্শের ভিত্তিতে একটি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী দেশে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। এই দাবি আদায়ের আন্দোলন থেকে জামায়াতে ইসলামীকে সরানো যাবে না। জামায়াতে ইসলামী এদেশের সকল রাজনৈতিক বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি চায়। জামায়াতে ইসলামীর আমীর, নায়েবে আমীর, সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সহ অসংখ্য নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত দুই মাস আগে রমজানে একটি ঘরোয়া ইফতার মাহফিল থেকে ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মু. সেলিম উদ্দিনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। সরকার ও প্রশাসন কতটা অন্ধ হয়ে গেছে তা তাদের জুলুম নির্যাতন ও অন্যায় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বুঝা যায়। বার বার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরেও জামায়াত নেতৃবৃন্দ বাহির হতে পারছেন না। জেলগেট থেকেই নেতৃবৃন্দকে নতুন নতুন মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হচ্ছে। বিষ্ময়করভাবে নেতৃবৃন্দ জেলখানায় আটক থাকা অবস্থাতে সংঘটিত বাহিরের ঘটনার মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এভাবে সরকার চরম অমানবিক ও নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিচ্ছে। এদেশের জনগণ সরকারের বহু অন্যায় সহ্য করেছে তারা আর ঘরে বসে থাকবে না। এবার জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করেই ঘরে ফিরবে ইনশাআল্লাহ।