বাউফল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বাউফলের গণমানুষের নেতা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ গত শনিবার (২০ মে) সকালে শহরের বনানী মোড়স্থ পটুয়াখালী জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সংঘটিত সংঘর্ষে আহতদের আজ দেখতে যান। ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে পটুয়াখালীতে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সারাদেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অবজ্ঞা, গায়েবি মামলা, নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় পুলিশের হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির’ প্রতিবাদ ও ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মসূচি পালন করছিল বিএনপি। পরে বিভিন্ন ইউনিট থেকে একে একে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকে কার্যালয়ের সামনে। পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একই সময়ে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে যুবলীগের সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিল সরকারপন্থীরা। একপর্যায়ে বনানী সড়ক প্রদক্ষিণকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় অসুস্থদের দেখতে ও তাদের খোঁজখবর নিয়ে ড. মাসুদ বলেন, দুঃশাসন ও জুলুমের বিরুদ্ধে আমরা মজুলমেরা ঐক্যবদ্ধ সর্বাত্মক লড়াই অব্যাহত রাখবো। সরকার দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলা ও প্রশাসনের কতিপয় অতি উৎসাহি কর্মকর্তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে আপনারা যারা আজকে আহত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় আছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আপনাদের দ্রুত সুস্থ্যতার জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করছি। একই সাথে আপনাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহ যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় নিয়ে আমরা পরস্পরের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
বাউফলে আমরা সকল দুঃশাসনের মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ থাকবো। বাউফল উপজেলাবাসী সব সময়ে স্বৈরাচারের অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ সব সময়ে সজাগ আছে। সেইদিন পটুয়াখীল বাউফলে আপনারা যে সাহস দেখিয়ে ত্যাগ কুরবানী করেছেন এবং দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছেন এটা আগামীতে গোটা বাংলাদেশের জন্য নজির হয়ে থাকবে। এই বাউফলে অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধের এই আন্দোলন দেশে ছড়িয়ে পড়বে। জুলুমবাজ এই স্বৈরাচারের পতন নিশ্চিত হবে। জুলুম নির্যাতনের এই ধারাবাহিকতা শুধু আজকে নয়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা বিচার মঞ্চস্থ করে হত্যা করা হয়েছে। এসব ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দেশে তারা বিচারিক হত্যাকা- ঘটিয়েছে। বিশ্ব বরেণ্য মুফাসসির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে এখনো কারাগারে আটকে রেখেছে। এই গণতন্ত্রের লড়াইয়ে গণ-মানুষের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এখনো পর্যন্ত আওয়ামী গোষ্ঠী অঘোষিত ভাবে আটকে রেখে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী অব্যাহত রেখেছে। অঘোষিত ভাবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে তারা গৃহবন্দি করে রেখেছে। আমরা এই সব জাতীয় নেতৃবৃন্দকে মুক্ত করার জন্য এবং দেশের সর্বস্তরের পরিচালক জনগণকে মুক্ত করার লক্ষ্যে আমাদের এই চলমান সব আন্দোলন সংগ্রাম ত্যাগ এবং কুরবানী জীবনবাজি রেখে আমরা চালিয়ে যাবো।
আপনারা আমার প্রিয় বাউফলের মানুষ হিসেবে নির্যাতিত হয়েছেন শুনে আমি ছুটে এসেছি আপনাদের পাশে। আপনাদের এই আন্দোলনে স্বৈরাচার বিরোধী এই দুর্নীতিবাজদের রুখে দিতে আমি নিজেও একজন নির্যাতিত ক্ষুদ্র কর্মী। আমি প্রায় সাড়ে চার বছর জালিমের কারাগারে জেল খেটেছি। নব্বই দিনের মতো রিমান্ড জুলুমের শিকার হয়েছিলাম। আমাকে বেশ কয়েক বার জামিন হওয়ার পরেও আবার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জেলগেট থেকে গ্রেফতার করে জুলুম নির্যাতনের চূড়ান্ত সীমা আমার উপরে পরিচালনা করা হয়েছিল। সুতরাং আমিও আপনাদের আন্দোলনের এক নির্যাতিত কর্মী হিসেবে আপনাদের দুঃখ কষ্ট উপলব্ধি করাটা স্বাভাবিক। আমরা দৃঢ়ভাবে অঙ্গিকারাবদ্ধ আছি জুলুমবাজ এই সরকার আরও যতোরকম জুলুম নির্যাতন চালাক না কেন আমরা এই লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখবো এবং এই জুলুম দুঃশাসনের পতন নিশ্চিত করে ছাড়বো।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আহত বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সামুয়েল আহমেদ লেলিন, বাউফল ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল মালেক, কালাইয়া বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আকতার হোসেন, কালাইয়া ইউনিয়ন যুবদল নেতা মোঃ ফরিদ উদ্দিন, বাউফল পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফজলুর রহমান, মদনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন মোল্লা, মদনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ লিয়াকত হোসেন রাজিব, ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ জালাল হোসেন প্রমুখ।
ড. মাসুদ আরও বলেন, জনগণকে সাথে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সব সময়ে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে এবার হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি এই হামলার সাথে জড়িত সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি তাদের গ্রেফতারে ভূমিকা রাখুন। আমরা দেখেছি সরকার এই আহতদের উপরেই আরও একটি মিথ্যা মামলা চাপিয়ে দিয়েছে। সেই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি।
জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন গোটা জনগণের আন্দোলনে আজ পরিণত হয়েছে। জনগণের লড়াই কখনো ব্যর্থ হয়নি হবে না। এ লড়াই সংগ্রামে আমরা বিজয়ী হবো এটা সুনিশ্চিত। আমরা বিজয়ী হয়ে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে দেশে তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা করে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে নিরপেক্ষ অবাধ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন করবো। সত্যিকার জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ থেকে আমরা এই জুলুমের অবসান ঘটাবো। তার মাধ্যমেই আমাদের এই ত্যাগ কুরবানী সফলতা লাভ করবে। আমরা আশা করি এই অবস্থায় আমরা ধৈর্য ধারণ করবো এবং আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে আরও দৃঢ়তা দেখানোর মাধ্যমে বাউফলবাসী আমরা গোটা দেশবাসীর সামনে একটা গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে আন্দোলনের জগতে নিজেদের উপস্থান করতে চাই সেই আহ্বান জনগণের প্রতি করছি।