বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে দু’টি আইন রয়েছে একটি আল্লাহর দেওয়া আইন, অপরটি মানুষের তৈরি করা আইন। আমরা যারা নিজেদেরকে ঈমানদার দাবি করি, তারা জীবনে চলার পথে সকল ক্ষেত্রে অবশ্যই আল্লাহর বিধানকে মেনে নিতে বাধ্য। যেখানে আল্লাহর বিধান বলবত নেই সেখানে একজন হজ্ব যাত্রী হিসেবে অবশ্যই আমাকে ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে হবে। সৃষ্টি যার আইন চলবে তার। আজকে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে কি সত্যিকার অর্থে আল্লাহর সেই আইন চালু আছে? হাজী সাহেবদেরকে কাবার গিলাফ ধরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই জমিন হচ্ছে আল্লাহর, এই দেশ হচ্ছে মুসলমানদের, এখানে আল্লাহর আইন চলবে আর কারো আইন আমরা মানবো না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে রোববার রাতে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে ও একইসাথে অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে হজ্ব যাত্রীদের নিয়ে গাইডলাইন ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসেন ও ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ড. মোবারক হোসাইনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, হজ্বে গিয়ে আপনারা কুরবানী করেন, শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারেন। আপনারা কেন শয়তানকে সেখানে পাথর মারেন সেটা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করবেন। এখানে মূলত নিজের নফসকে শয়তান থেকে মুক্ত করার ট্রেনিং দেওয়া হয়। মানুষ তার রবকে ভুলে শয়তানের প্ররোচনায় ভুল পথে চলে যায়। এজন্যই ইবরাহিম আ. এবং তার পুত্র ইসমাঈল আ. এর কুরবানির ঘটনাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিদর্শন হিসেবে সমগ্র মানব জাতির কাছে পেশ করেছেন। সেখান থেকেই নিজের প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার শিক্ষা আমরা পেয়েছি। একজন মুসলিম হিসেবে আমার কাছে জীবনের চাইতে বড় হওয়া উচিৎ আল্লাহর আইন সমাজ ও রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করা। প্রয়োজনে আমার সবকিছু কুরবানী করতেও আমরা যেন প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু কোনো ভাবেই আমি আল্লাহর আইনকে লঙ্ঘন করতে পারি না, এটাই হজ্বের মৌলিক শিক্ষা। শয়তানকে পাথর মারার মাধ্যমে আল্লাহর আইন পালনে বাঁধা দানকারী কোনো সত্তাকে পাথর দ্বারা প্রতিহত করা, তার সাথে কোন আপস না করার প্রশিক্ষণও আমরা হজ্ব থেকে পাই। শয়তান আমাদের প্রকাশ্য দুশমন, সে কিন্তু একা নয় তার দলবলও রয়েছে। রাসূল সা. তাগুতের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। নবী সা. কুরআনের আইন বাস্তবায়ন করার প্রয়োজনে ৮০টি যুদ্ধ করেছেন। তাই নিজেদের ঈমানের দাবী পুরনের জন্য কুরআনের আইন বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করতে হবে। আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য আমাদের দরকার হযরত ইবরাহীমের মতো পিতার। বিবি হাজেরার মতো মায়ের, যে মা তার নিজের সন্তানকে আল্লাহর কাছে কুরবানী করতেও কোন অভিযোগ করে না। ইসমাঈলের মতো সন্তানের, যিনি বলবেন, হে আমার পিতা আল্লাহ আপনাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করুন, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন। আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করার জন্য যিনি নিজেকে সপে দিলেন। আমাদেরকেও সেই রকম পিতা হতে হবে, সেই রকম মা ও সন্তান হতে হবে।
মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, হজ্ব যাত্রীদের নিয়ে এই সুন্দর আয়োজন অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে। হাজীবৃন্দ আপনারা ইতোমধ্যেই হজ্বের নিয়ত করার পর থেকেই তা সঠিকভাবে পালনের জ্ঞান অর্জন করছেন এটা ভালোর দিক। যেদিন বাড়ি থেকে আমরা বের হবো সেদিন থেকেই হজ্বের অনেক গুলো নিয়ম ধারাবাহিকভাবে আমাদের পালন করতে হবে। পুরুষ ও মহিলা হজ্বযাত্রী যারা রয়েছেন তারা নিজের বাসায় গোসল করে এহরামের সুন্নাত পোষাক পরে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ মুখে বলতে বলতে যাত্রা করবেন ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এ বছর যারা হজ্বে যাচ্ছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাদের সকলের হজ্বকে কবুল করুন এবং নিরাপত্তার সাথে সকল হজ্ব যাত্রীগণ মক্কায় পৌঁছিয়ে হজ্বব্রত পালন শেষে আবার ফিরে আসতে পারেন সে দোয়া করি। আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্ব যাত্রীদের খেদমতে এই আয়োজন করেছি। হজ্বের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে এসে আপনারা বাংলাদেশে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাবেন সে প্রত্যাশা করছি। হজ্বব্রত পালন করে এসে পূর্বের চেয়েও আরও বেশি দায়িত্ববোধ নিয়ে ইসলামের সুমহান আদর্শকে বিজয়ী করার জন্য ভূমিকা রাখবো ইনশাআল্লাহ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, হজ্বে যাওয়ার লক্ষ্য হচ্ছে আপনি দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য না দিয়ে বরং আখেরাতের প্রস্তুতি নেওয়া। হজ্ব আমাদের দুনিয়ার মোহকে তুচ্ছ করে পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করার শিক্ষা দেয়। সেখানে কাবার চত্ত্বরে গিয়ে একেরপর এক ঘুরছেন বা তাওয়াফ করছেন এর অর্থ হলো আপনি দুনিয়ার পিছনে আর ঘুরতে চাইবেন না। আমি এখন আমার রবের পিঁছনে ছুটবো। আল্লাহর দিকে দৌঁড়ানোর সত্যিকার মানসিকতা সেখান থেকে অর্জিত হয়। আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের জন্য এভাবেই আমাদের মধ্যে পেরেশানী জাগ্রত রাখতে হবে।