বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর (ভারপ্রাপ্ত) ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান পটুয়াখালী জিলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলন-২০২৩ এ তার বক্তব্যে বলেন, তারাই হচ্ছে সত্যিকার আল্লাহ ওয়ালা যারা শুধুমাত্র পোশাকেই নয় বরং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে। আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহ মধ্যে অন্যতম সুন্নাহ হচ্ছে বেশি বেশি সালাম দেয়া, ইয়াতিমদের প্রতিপালন ও অনাহারীকে খাবার প্রদান। তিনি বলেন, ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না থাকলে সেখানেই জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয়। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে জঙ্গিবাদ মূলোৎপাটিত হবে ইনশাআল্লাহ। পটুয়াখালী জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে আন্দোলনের দাওয়াত তুলে ধরে সংগঠনে আহবান পৌঁছিয়ে দেন। এসময় তিনি বলেন, সরকার যত প্রচেষ্টা চালাক না কেন, যত জুলুম-নির্যাতন করুক না কেন, আমরা জীবন দেব কিন্তু ঈমান হারা হবো না। তিনি আপামর জনসাধারণকে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে উদাত্ত আহবান জানান। কুরআন সুন্নাহর আইনকে সমাজ রাষ্ট্রে বিজয়ী করার কাজে যিনি জড়িত হবেন চেষ্টা চালাবেন তখন-ই তিনি আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হবেন। সকল তাফসিরকারক একমত যে, যিনি আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার কাজ করেন না তারা কখনই মুমিন বিশ্বাসী ব্যক্তি নন। বাংলাদেশে সকল মতবাদকে উপড়ে ফেলে আল্লাহর দেওয়া বিধান আইনকে প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত না আমরা এ কাজে সফল হবো ততোদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ইকামাতে দ্বীনের কাজে হয় আমরা বিজয়ী হবো নতুবা এ কাজে আমাদের জীবন চলে যাবে। কোনো প্রলোভন আমাদেরকে কালিমার এ আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু বাতিলের কাছে মাথানত করতে আমরা রাজি নই। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে জামায়াতের সাবেক আমীরে জামায়াত শহীদ মতিউর রহমান নিজামী রহ. এবং সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ সহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ফাঁসির কাঠে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তবুও বাতিলের কাছে মাথানত করেন নাই। তারা এদেশে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়ে গিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ প্রমাণ করেছেন জামায়াতে ইসলামী এমন একটি দল যারা জীবন দিতে পারেন কিন্তু বাতিলের কাছে মাথানত করতে পারে না। আজকে বর্তমান আমীরে জামায়াত, সেক্রেটারি সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতৃবৃন্দকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এসব নেতৃবৃন্দ বাতিলের সাথে কোনো আপস করে চলেন না। আমরা যারা বাহিরে আছি, বিশেষ করে আজকে পটুয়াখালীর কয়েক হাজার কর্মী ভাই-বোনদেরকে আহ্বান জানাতে চাই। এই সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে যোগ্য দক্ষ ও ভালো মানুষের বিকল্প নেই। ভালো দিয়ে মন্দকে মোকাবেলা করতে হবে, মন্দকে মন্দ দিয়ে নয়। সেজন্য ইসলামের সঠিক শিক্ষা অর্জন করে ব্যক্তি থেকে সমাজ দেশ রাষ্ট্র পরিচালনায় যোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবে পরিণত হতে হবে। আজকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার মতো যোগ্য লোক এই পটুয়াখালী বা বাউফলে রয়েছে, তাদেরকে সমর্থন করে আপনারা সকল জনগণ এলাকার ভবিষ্যত নির্মাণে ভূমিকা রাখবেন। তাদেরকে সামনে এগিয়ে দিয়ে দেশের সেবা করার সুযোগ তৈরি করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। সংসদে আজান নামাজের বিরতি এখনো দেওয়া হয়, এটা ইসলামী আন্দোলনেরই অবদান। জামায়াত নেতৃবৃন্দের অবদান বললেও ভুল হবে না। মানুষ মারা গেলে আজও সংসদে শোক বার্তা সমবেদনা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয় এটা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অবদান, আমরা যার সূচনা করে দিয়ে এসেছি। আগামীতে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে যাতে জামায়াত আরও বিশেষ কাজ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয় সেজন্য দেশের জনগণের সমর্থন সহযোগিতা করতে হবে।
আজ ১৩ মে’ শনিবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পটুয়াখালী জেলা শাখার আয়োজনে কর্মী সম্মেলন ২০২৩ এ তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও পটুয়াখালী জেলা শাখার আমীর অধ্যাপক শাহ আলম সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট মুয়াযযম হুসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সেক্রেটারি ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগরী আমীর অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন বাবর, জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক আঃ সালাম খান, জেলা সেক্রেটারি এ্যাড. নাজমুল আহসান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসাইন ও অধ্যাপক এ.বি.এম. সাইফুইল্লাহ, অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম আল কায়সারী, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সভাপতি মু. সাইদুর রহমান খান, জেলা ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ সেক্রেটারি মাওলানা আবদুদ দ্যাইয়ান সহ প্রমুখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, যুগে যুগে অনেক ঈমানদার ব্যক্তিরা সমাজ দেশ রাষ্ট্রে মহান আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন। যারা আল্লাহর আইনকে বিজয়ী করার কাজে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকেই আল্লাহওয়ালা লোক বা নবীওয়ালা ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বহু নবী ও রাসূলের সাথে এজাতীয় সহযোগী মানুষ হিসেবে বাছাই করে নিয়েছেন। এসব খোদাভীরু সাধারণ মানুষ আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম চালিয়ে গেছে। তারা মানুষের তৈরি করা আইনকে উৎখাত করে সেখানে আল্লাহর আইনকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যারা আল্লাহর আইনকে বিজয়ী করার কাজে সহযোগিতা করেছে তাদেরই কেবল আল্লাহওয়ালা লোক বলা হয়েছে। আমাদের সমাজে এর ভুল ব্যাখ্যা চলছে, বুজুর্গ দরবেশগীরীকে বোঝানো হয়। প্রকৃত অর্থে তারাই আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি যারা আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য সংগ্রাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। মানুষের আইনকে প্রতিহত করে আল্লাহর আইনকে মেনে নেওয়াই আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ঈমানদার তো সে যে কাফেলার দায়িত্ব বহন করে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা অপরিহার্য দায়িত্ব। জামায়াতের কর্মী হিসেবে আমাদেরকে সমাজ পরিবর্তনে সম্মুখে থাকতে হবে। কুরআন সুন্নাহর আলোকে এগিয়ে যেতে হবে।
এডভোকেট মুয়াযযম হুসাইন হেলাল বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় হতে অদ্যবধি দেশের জনগণ স্বাধীনতাকে অর্থবহ দেখতে ও সার্বভৌমত্ব অটুট রাখতে ইসলামী আন্দোলনের দিকে তাঁকিয়ে আছে। আজকে এই জনগণ চাই প্রত্যাশা করে জাতির নেতৃত্বে সৎ দক্ষ খোদাভীরু মানুষ আসুক।
বাউফলের গণমানুষের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ সম্মেলনে তার বক্তব্যে বলেন, কর্মী হিসেবে কাজ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর ইকামাতে দ্বীনের এ কাজ আঞ্জাম দেওয়া আমাদের ঈমানের দাবি। পটুয়াখালী জেলার বিশ লাখ মানুষের দায়িত্ব দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী হিসেবে সমাজ পরিবর্তনে আপনাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। জামায়াতে ইসলামী এদেশে একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে স্বীকৃত এবং এটাই সরকার ও অন্যান্য ইসলাম বিরোধী শক্তির আতংকের কারণ। আজ সবখানে বাতিল শক্তির সাথে ইসলামী আন্দোলনের বৈরিতা এজন্যই কঠিন থেকে কঠিনতরো হয়ে উঠছে। এই জাতির পরিবর্তনের জন্য আমাদেরকে একটা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
সভাপতি অধ্যাপক শাহ আলম বলেন, এ সম্মেলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। বিগত কয়েক বছর জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জামায়াতে ইসলামী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে তাতে জামায়াতের প্রতি দেশের সচেতন নাগরিকের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। জনগণের মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য জামায়াত এককভাবে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে চলুক এটাই রাজনীতি সচেতন মহল জামায়াতের নেতৃবৃন্দের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছেন।