চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সম্প্রতি চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের তিনটি ও শাজাহানপুর ইউনিয়নে একটি পুড়ে যাওয়া বাড়ি পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল। নগদ সহায়তা প্রদানের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক আমানুল্লাহ, মোক্তার হোসেনসহ স্থানীয় জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নিপিড়িত মজলুম সংগঠন। তবুও মানবতার যেকোনো বিপদে মুসবিতে সবার আগে দেশের সবখানে জামায়াত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে তাদের পাশে ছুটে যায়। জামায়াত শুধু রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই সেটা নয় বরং এই দেশের আপামর জনগণের সার্বিক কল্যাণে জামায়াত নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করা নয় আমাদের মূল লক্ষ্য মানবতার কল্যাণ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের জনগণের পাশে জামায়াত ছিলো, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। বিগত সময়ে এই চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনায় সতের জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সেই সতের জনের প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার করে টাকা তাৎক্ষণিক আমরা সহযোগিতা করেছি। ঐ ঘটনায় আহত একুশ জনকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। বিগত সময়ে রেলে কাটা পড়ে এখানে তিন জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন, তাদের পরিবারকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা ছুটে গিয়েছিলেন এবং প্রত্যেক পরিবারকে চল্লিশ হাজার টাকা করে সহযোগিতা স্বান্তনা তুলে দিয়ে এসেছি। জামায়াতে ইসলামী সব সময়ে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ক্ষতিগ্রস্ত যেকোনো মানুষের সহযোগিতায় পাশে থাকতে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সবুজ জমিনে আমরা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দ্বীন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছি। আল্লাহর দ্বীন যদি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায় সত্যিকার অর্থে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। যে রাষ্ট্রে মানুষ কোনো বিপদে মুসিবতে পড়লে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই সেখানে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় সব প্রতিনিধি সেখানে ছুটে আসবেন। সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ থাকবে। সেই সব বরাদ্দ ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে নিশ্চিতভাবে তুলে দেওয়ার সব ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু দূর্ভাগ্য বাংলাদেশের জনগণের জন্য, এখানে জনগণের সরাসরি ভোট বা সমর্থনের ভিত্তিতেও কোনো সরকার নেই আবার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ হলেও ইসলামী বিধানের আলোকে এখানে রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি হয়নি। আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি বাংলাদেশে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। যদিও আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য আজও পূরণ হয়নি। অন্যদিকে যারা ইসলামী মূল্যবোধের রাষ্ট্র ব্যবস্থার চিন্তা করছে তাদের উপরে জুলুম অত্যাচার নিপিড়ন করে চরমভাবে আবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। দেশের জনগণ বিশ্বাস করে ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে যাওয়া বর্তমান সরকার খুব দ্রুতই বিদায় নিবে এবং দেশে জনগণের সমর্থিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। এমতাবস্থায় অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন ও জণগণকে নিজের ভোট নিজে প্রদানের সুযোগ করে দিতে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার বা নিরপেক্ষ একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ লক্ষ্যে দেশের সচেতন মহল সহ সম্মিলিতভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আজকে জামায়াতের নিবন্ধনকে নিষিদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়ে বিচারিক হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতের লাখ লাখ নেতা-কর্মীর নামে হাজার হাজার মামলা দিয়ে হয়রানী অব্যাহত রয়েছে। নিজ বাড়িতে থাকার মতো পরিবেশ জামায়াতের নেতা-কর্মীদের নেই। সমাজের সচেতন এসব মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী-বাকরী, কর্ম ক্ষেত্র সবখানে অন্যায়ভাবে জুলুম চালানো হচ্ছে। এরপরও আজকে যেখানেই দেশের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় বিপদে মুসিবতে পড়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সেখানে মানবতার পাশে ছুটে যাচ্ছে। এসব বিপদ আপদকে আমরা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা মনে করি। আমরা ধৈর্য ও সবরের সাথে সকল পরিস্থি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছি। সর্বাবস্থায় আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে বলি। তিনি সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করার একমাত্র মালিক।