বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজকে আমরা আপনাদের মাঝে ছুটে এসেছি। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি-ই করেছেন মানুষ ও অন্যের কল্যাণে কাজ করার জন্য। মানুষের বিপদে তার পাশে দাঁড়ানো সবচেয়ে বড় ইবাদত। সেবার নিয়তে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, একজন মুসলিম ভাই হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন ও রাসূল সা. এর দেখানো পথে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আজ বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে জামায়াত আর্থিক সহযোগিতা তুলে দিচ্ছে। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি, আপনাদের দুঃখ কষ্টে শরিক হওয়ার তৌফিক তিনি দিয়েছেন। কাল কেয়ামতের কঠিন দিনেও যেন মহান আল্লাহর সামনে গিয়ে আমরা বলতে পারি, আমাদের সীমিত সাধ্য ছিলো সেটা নিয়েই বাংলাদেশের অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ব্যবসায়ীদের পাশে গিয়ে সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন। যদিও জামায়াতের জন্য সেখানে প্রতিকূল পরিবেশে সেবামূলক একাজ পরিচালনা করা খুবই কঠিন ছিলো। এরপরও মহানগরী জামায়াত তাদের সাধ্যমত সেখানে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের নিয়মিত খোঁজখবর রেখছে। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পরীক্ষা করেন। ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দিয়ে। সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি চূড়ান্ত আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সবরের সাথে এই পরীক্ষায় আমাদের উত্তীর্ণ হতে হবে। আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন দ্রুত আপনাদের এ অবস্থার পরিবর্তন করে দেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আজ ৭ এপ্রিল জুমাবার বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসের শুরা সদস্য আহসান হাবিব, শাহীন আহমদ খান, আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এসময় উপস্থিত ৩০ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রত্যেককে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং ইফতার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে দেশে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনকে জনগণের স্বার্থে আরও জোরদার করতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য জামায়াত আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমরা আন্দোলন করছি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা ফিরে আনার জন্য। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। আমার ভোট আমি দিবো যাকে খুশি তাকে দিবো, এই দাবি আমরা করে যাচ্ছি। এটা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই আমরা করে যাচ্ছি। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, জনগণের কথা বলার অধিকার নেই, এমনকি মানুষের জান ও মালেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। সরকার তার সামগ্রিক ব্যর্থতায় দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা) প্রদর্শিত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ইসলাম। শুধুমাত্র ইসলামই জনগণকে তার প্রকৃত নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এমতাবস্থায় দেশের মানুষের মুক্তির জন্য ইসলামের সু-মহান আদর্শের ভিত্তিতে একটি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, বঙ্গবাজারে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পূরণীয় নয়। আমরা মনে করি এতো বড় ক্ষতির দিনে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা না নিলে কোনো ভাবেই ব্যবসায়ীদের প্রকৃত কল্যাণ করা হবে না। আজকে দুঃখের এই দিনে আমরা জামায়াতের পক্ষ থেকে আপনাদের সাথে আছি, ভবিষ্যতেও যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মাল ফসল এবং সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমেও মহান আল্লাহ তার বান্দাদের পরীক্ষা করে থাকেন। এই পরীক্ষার মাঝেই ধৈর্যশীলদের জন্য সু-সংবাদ। আজকে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, বিপদগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের লক্ষ্য করেই আল্লাহ বলেছেন, এই পৃথিবীতে এমন কোনো বিপদ মুসিবত আসে না যা আল্লাহ সৃষ্টির বহু পূর্বেই লিপিবদ্ধ করে রাখেননি। এটা ঈমানদারদের জন্য পরীক্ষা। আজকে বলা যায় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড। প্রথম দিন থেকেই জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সেচ্ছাসেবক হিসেবে নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে তারা কাজ করছে। আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি যে, এই ধরনের একটি মানবিক বিপর্যয়ের দিনেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা সেখানে গিয়ে পরিচয় দিয়ে কাজ করবে, তেমন কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাইয়েরা চেষ্টা করেছেন, সেনাবাহিনী চেষ্টা করেছে, এসব চেষ্টার সাথে জামায়াতের মতো সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক সংগঠনের লাখ লাখ নেতা-কর্মী যুক্ত হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা আরও উপকৃত হতে পারতো। আজকে সরকার মাত্র ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এসব ব্যবসায়ীদের সাথে চরম প্রত্যারণা করছে। দেশে মেগা মেগা প্রকল্পের নামে বিরাট বিরাট বাজেট দেওয়া হচ্ছে। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত এসব জনগণের সাথে উপহাস করা হচ্ছে। প্রতিবাদ জানিয়ে বলতে চাই, ব্যবসায়ীদের সাথে প্রহসন তামাসা করা বন্ধ করুন। বিগত সময়ে জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ড, সিলেটের বন্যা, সুনামগঞ্জ কুড়িগ্রাম ঠাকুরগাঁও সহ নৌকা ডুবি থেকে শুরু করে সব বড় বড় দূর্ঘটনায় মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের জনগণ সুযোগের অপেক্ষায় আছে, আজ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই তারা।