বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি, বাউফলের গণমানুষের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আলোচনা সভা ও ইফতার অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বলেন, রোজা হচ্ছে অন্যায়ের সাথে আপস না করার প্রশিক্ষণ। আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদেরকে রমজানের মতো এমন বরকতপূর্ণ মাস উপহার দিয়েছেন এর মধ্য দিয়ে তিনি আমাদেরকে দয়া করতে চান, রহতম বর্ষন করতে চান। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার অনুগ্রহের চাদরে আচ্ছাদিত করতে পছন্দ করেন। কারণ এই মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন নাজিল করেছেন। এই কুরআনের মধ্যেই গোটা মানবজাতির জন্য পথ নির্দেশনা দেওয়া আছে। একজন ঈমানদার হিসেবে ঐ উপর ওয়ালা মহান আল্লাহর গোলামী করতে গিয়ে সারা দুনিয়ার চাপ সহ্য করতে আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা জাগতিক যেকোনো চাপ মোকাবেলা করেই এই বাউফলবাসীসহ গোটা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ। একজন রোজাদার হিসেবে বন্দুকের গুলির সামনেও আমরা আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। প্রশাসনের কতিপয় দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলতে চাই, আমরা আপনার ঈমানের কাছে প্রশ্ন রাখি, সামান্য চাকুরী বাঁচাতে গিয়ে আপনি কেন ঐ আরশে আজিম মহান আল্লাহর দেওয়া বিধানের বিপরীতে গিয়ে ক্ষুদ্র কোনো ব্যক্তি স্বার্থের মানুষের গোলামে পরিণত হয়েছেন। কোনো মুসলমান নিজের ব্যক্তিগত আমলে পরিশুদ্ধতা অর্জন করতে গেলে কেন আপনারা তাদেরকে জঙ্গিবাদের তকমা লাগিয়ে দিতে উদ্ধ্যত হচ্ছেন। আপনি রোজা পালনে সিয়ামের জন্য যে আল্লাহকে ভয় করলেন, নিজের ঈমান বাঁচানোর প্রয়োজনে কেন সেই আল্লাহকে ভয় করেন না। ঈমানের বিনিময় তো সেই জান্নাত, যার প্রত্যাশা আমি আপনি আমরা সকলে করি। আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে তোমরা রোজা রেখে যে পুরস্কার ঢাল স্বরূপ পেয়েছ, তা কাজে লাগিয়ে আকিমুদ্বীনকে বিজয়ী করো। রোজা রেখে সর্বপ্রথম নিজের নফসের সাথে সংগ্রাম করুন। ন্যায়-অন্যায় ভালো মন্দ যাচাই করার জ্ঞান অর্জন করুন।
আজ ৮ রমজান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাউফল উপজেলা শাখার উদ্যোগে রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ইফতার অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দাওয়াহ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পটুয়াখালী জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মু. ইসহাক মিয়া, মাওলানা আব্দুদ দাইয়্যান, উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক খালিদুর রহমান, ছাত্রশিবিরের পটুয়াখালী জেলা সভাপতি আলী আজগর, জেলা সেক্রেটারি হাফেজ মাহদী হাসান, জেলা সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, সাবেক জেলা সভাপতি কবির হুসাইন, মু. আল আমিন, উপজেলা ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আজ আলেম উলামা মাশায়েখদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের হামলা ও গ্রেফতারে তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গত ২৭ মার্চ রাতে তারাবীহ’র নামাজ আদায় করার সময়ে রাজধানীর গুলশানে পুলিশ কর্তৃক ৩ জন হাফেজ, দুইজন নারী ও এক জন শিশুসহ ১৭ জনকে ইবাদতের কালে সম্পূর্ণ বেআইনী ও অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের নিন্দা জানাবার ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সকল নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করার দাবি করছি। এদিকে বাদ জুমা হাজার হাজার দেশবরেণ্য জাতীয় সব আলেম-উলামার অংশ গ্রহণে ও লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের স্বতঃষ্ফূর্ত উপস্থিতিতে বাইতুল মোকাররামের উত্তর গেইটে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পরে মিছিলটি রাজধানীর নাইটিংগেল মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ শান্তিপূর্ণ এই মিছিলের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং সেখান থেকে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে। মুসলমান দেশে এটা চরম মানবাধিকারের শামীল।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ আরও বলেন, রমজানের রোজা পালনের শিক্ষা হল যাবো না আমি সুদের কাছেও, যাবো না আমি ঘুষের কাছেও, একই সাথে কোনো অন্যায়ের কাছে আমি মাথা নত করবো না। এটাই হচ্ছে রোজা পালনের মূল শিক্ষা। এই রমজানের রাত্রিবেলার দরবেশগীরী তোমার আমার দিনের বেলা সৈনিকগীরী করার নিমিত্তে। প্রকৃত রোজাদের নেতৃত্ব সমাজে কায়েমের জন্য আমাদেরকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। যতক্ষন পর্যন্ত তাকওয়ার ভিত্তিতে না সমাজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত প্রশাসনের ভাইয়েরা আপনারাও নিরাপদে নির্বিঘ্নে ঘুম যেতে পারবেন না। কারণ আল্লাহর দেওয়া বিধান বাস্তবায়ন ছাড়া কানো মানুষের জীবনযাপনেই প্রকৃত শান্তি আসা সম্ভব নয়। আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর রহমতে এদেশের মাঝে অহমিকা থেকে মুক্ত হয়ে একথা বলতে পারি, শুধু কর্মসূচি দিয়ে খোদাভীরু লোক তৈরি করা নয় বরং এসব খোদাভীরু লোক একই সাথে মসজিদের দায়িত্ব পালন করেছে আবার সংসদে গিয়ে জনগণের সুখ শান্তির খবর দায়িত্ব পালন করেছেন। মন্ত্রণালয়ে গিয়েও জামায়াতের এসব নেতৃত্ব যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালনের নজির স্থাপন করেছেন।