বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এটা অত্যন্ত বিরল যে বাংলাদেশের এই ভূখন্ডকে দুই বার অন্যদের আগ্রাসন থেকে স্বাধীন করতে হয়েছে। আজ বাংলাদেশে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে যে, তা আবারো স্বাধীন করতে হবে। আগের দু’টো স্বাধীনতা ছিলো ভৌগোলিকভাবে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান থেকে। এবারের স্বাধীনতা হবে জাতির ঘাড়ে চেপে বসা জঞ্জালকে অপসারণের মাধ্যমে বিশ কোটি জনগণকে মুক্ত করার, জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার। ফ্যাসিবাদের কবল থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মতো এতো বড় রাজনৈতিক সংগঠন আজকে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি প্রকাশ্যে পালন করার অনুমতি পাচ্ছে না। এমনকি বিরোধী মতাদর্শের অনুসারী কোনো গোষ্ঠী সত্যিকারভাবে স্বাধীনতার আলোচনা করতে পারছে না। এ থেকেই স্পষ্ট হয় মূলত আজও দেশের জনগণ তার স্বাধীনতা পায়নি। তিনি বলেন, সমাজকে পরিপূর্ণভাবে পরিবর্তন করতে হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের হাতে তুলে দিতে হবে। তা না হলে সত্যিকারভাবে মানুষের কোনো কল্যাণ হবে না। তিনি প্রকৃত স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল বিরোধী দলকে মতাদর্শের ভিন্নতা সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
শনিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে দেলওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ফরিদ হোসাইন, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল-আমিন, মাওলানা এস আলম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট কামাল উদ্দিন, আব্দুস সালাম, হাফিজুর রহমান, শেখ শরিফ উদ্দিন আহমদ, ড. মোবারক হোসাইন, সৈয়দ সিরাজুল হক, কামরুল আহসান হাসান, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস হল দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের। সু-দক্ষ লিডারশীপ না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন বার বার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এটা চরম লজ্জার যে, স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশতাব্দি পরেও বাংলাদেশকে বিদেশী প্রভুদের দ্বারস্থ হয়ে পথ চলতে হয়। বাংলাদেশের যেকোনো জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে আমরা আজও ঐক্যমতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি। আজকে পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। জনগণের অধিকার ও মর্যাদা বর্তমান আওয়ামী শাসক শ্রেণির কাছে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়ে আছে। যে গণতন্ত্রের কথা বলা হয় তা বাংলাদেশে পরিপূর্ণভাবে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। জনগণের ভোট, ভাত, কাপড়, শিক্ষা সহ সকল অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। সবকিছুর অধিকার আজ চরমভাবে ভূলুন্ঠিত। এমতাবস্থায় দেশ গঠনে ইসলামের সুমহান আদর্শের ভিত্তিতে সংগ্রাম করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। যে আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হলে দেশের বিশ কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাসূল সা. এর দেখানো আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে। দেশপ্রেমের প্রথম শর্ত হচ্ছে সততা। মূল উপাদান হচ্ছে মানুষ। যারা দুর্নীতি করে মানুষকে ঠকায় তারা দেশপ্রেমিক হতে পারে না। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, এদেশের একমাত্র দেশপ্রেমিক দল হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, কারণ তারা সৎ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে জনমতের ভিত্তিতে সবচেয়ে বড় ৩টি রাজনৈতিক দল হলো বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের প্রহসনের নির্বাচন দেখার পরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোন দলীয় সরকারের অধীনে প্রহসনের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না। দল নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। এজন্য বিভাজন বাদ দিয়ে বাম, ডান, ইসলামপন্থী সকল বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র তিন বা চার বছরের মাথায় যারা ক্ষমতায় বসে পুরো দেশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে হত্যা করেছে, তাদের মুখে স্বাধীনতা রক্ষার গল্প মানায় না। এদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা সবচেয়ে বড় দাবিদার বলে নিজেদের প্রকাশ করতে চাই। তারাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত করে চলেছে। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই সর্বপ্রথম দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আজও বাংলাদেশের মানুষের সত্যিকার স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনীকে সম্পূর্ণ দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। এরা জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। জনগণের সেবায় নিয়োজিত এসব প্রতিষ্ঠানকে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হচ্ছে। জনসমর্থনহীন এই আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের ন্যায়বিচার আজকে ভূলুণ্ঠিত, সুষ্ঠু ভোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে নির্বাচন কমিশন তা আজ ঠুটো জগন্নাথে পরিণত করা হয়েছে। পরপর তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার কারণে দেশের সমস্ত মৌলিক কাঠামো গুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট তৈরি করে এদেশের মিডিয়া ও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রেখে জনগণের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় আমাদের জনগণের সকল ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান অবৈধ, ফ্যাসিষ্ট সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। এই অপশক্তির হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বিদায় করে জনগণের সত্যিকার স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল মাত্র তিন বা চার পরের ব্যবধানে বাকশাল গঠন করে সেই স্বাধীনতাকে ম্লান করে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে গণতন্ত্রের মানে কি তা শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব বাংলাদেশের মানুষকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় তারই সুযোগ্য কন্যা আজকে পুরো বাংলাদেশের জনগণকে সেই গণতন্ত্রের স্বাদ আস্বাদন করিয়ে দেখাচ্ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।