বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি, বাউফলের গণমানুষের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালীতে জামায়াতে ইসলামীর রোকন সম্মেলনে তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের বিশ কোটি মানুষ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে একদিন আপনাদের অবৈধ সকল কর্মকান্ডকে রুখে বের হয়ে পড়েছে। সেদিন আপনাদের কোনো অনুমতি নেওয়ার তোয়াক্কা এই জনগণ করবে না। বর্তমান জনবিচ্ছিন্ন অবৈধ সরকার ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সকল অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি অনিয়ম বিশৃঙ্খলা করে পুরো বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাপনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। উপস্থিত আপনারা সকলে দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যুক্ত হয়ে দেশের বিশ কোটি জনগণের কল্যাণে আত্মনিবেদিত। এবারের রুকন সম্মেলন এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হ চ্ছে যখন জামায়াতে ইসলামী এদেশে একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে স্বীকৃত এবং এটাই সরকার ও অন্যান্য ইসলাম বিরোধী শক্তির আতংকের কারণ। সংগঠনের রোকন হচ্ছেন তারা যারা ঝড়ের গতির সাথে মিশে যাবে না, নদীর স্রোতের সাথে সাঁতরে যাবে না বরং ঐ স্রোতের গতিকেই তারা পাল্টে দিবে। আজ সবখানে বাতিল শক্তির সাথে ইসলামী আন্দোলনের বৈরিতা এজন্যই কঠিন থেকে কঠিনতরো হয়ে উঠছে। এই জাতির পরিবর্তনের জন্য আমাদেরকে একটা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা যারা দায়িত্বে রয়েছেন আপনাদের চরম ব্যর্থতা আপনারা জামায়াত-শিবিরের মতো সুশৃঙ্খল সংগঠনের দায়িত্ব নিতে পারেন না কেন? মিছিল সমাবেশের জন্য আবেদনের পরে আবেদন করা হলেও অনুমতি মিলছে না। এ ব্যর্থতার জবাব একদিন এদেশের জনগণের কাছে আপনাদেরকে দিতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, দেশের জনগণের উপরে দুর্ভিক্ষ চলছে। জামায়াতে ইসলামীর আমীর দেশের জনগণের মুক্তির ১০ দফা ঘোষণার পর থেকেই বাতিলের গা-জ্বালা যে পরিমাণ বাড়ছে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রগতি ও বলিষ্ঠতার স্বীকৃতিও সে পরিমাণেই আমরা অনুভব করছি। আপনার আনুগত্যের শৃঙ্খলায় সামান্য ত্রুটি হলে শুধু সংগঠনই নয় স্বাভাবিক জীবন যাত্রাও ব্যহত হবে। কারণ এই নিখুঁত পরিকল্পনা মহান আল্লাহ নিজে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা তার পরিকল্পনার মাঝে আছি বলেই সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি, আলহামদুলিল্লাহ। তাই আপনারা লক্ষ্য করবেন, প্রচলিত আইনের শাসন ও সাংবিধানিক সীমী অতিক্রম করে প্রশাসনের অতি উৎসাহি কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে বিনা ওয়ারেন্টে মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় জামায়াত নেতাকর্মীসহ নিরিহ সাধারণ ব্যবসায়ি, চাকুরীজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষকদের বাসা-বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি গায়েবী মামলায় জামিন পাওয়ার পরও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানকে পুনরায় জেলগেট থেকে গ্রেফতার করে আবারো রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তিতে এসব গ্রেফতারকৃতদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী আদালতে না নিয়ে অন্যত্র রেখে অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদেরকে সাথে নিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক অভিযানে বের হয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের হয়রানি করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের উপরে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। যা আইনের শাসন ও মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। পুলিশের কতিপয় চিহ্নিত কর্তা ব্যক্তিরা গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতাকর্মীদের রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা দাবি করার অভিযোগ করছে ভুক্তভোগী পরিবার গুলো। তাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের চরম ঊদ্ধত আচরণের শামিল। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন সরকার দমন-পিড়নের পথ বেছে নিয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন বর্তমান আওয়ামী সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘায়িত করতে দেশের জনগণের উপরে জুলুম-নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ সম্মেলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। বিগত কয়েক বছর জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জামায়াতে ইসলামী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে তাতে জামায়াতের প্রতি দেশের সচেতন নাগরিকের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। জনগণের মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য জামায়াত এককভাবে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে চলুক এটাই রাজনীতি সচেতন মহল জামায়াতের নেতৃবৃন্দের নিকট জোর দাবি জানা চ্ছেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পটুয়াখালী জেলা শাখার আয়োজনে রোকন সম্মেলন ২০২৩ এ তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও পটুয়াখালী জেলা শাখার আমীর অধ্যাপক শাহ আলম সভাপতিত্বে এবং পটুয়াখালী জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মু. নাজমুল আহসান সঞ্চালনায় রোকন সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক আঃ সালাম খান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসাইন ও অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম আল কায়সারী, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবুল বশার সাইফুল্লাহসহ প্রমুখ।