বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর, সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে ৫টি আয়াত নাযিল করেছেন, তাতে প্রথমেই পড়ার কথা বলেছেন। আর পড়া মানেই শিক্ষা। বুঝে পড়ার নামই হচ্ছে শিক্ষা। কুরআনে আল্লাহর নামে শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর নাম বাদ দিয়ে কোন শিক্ষা হতে পারে না। সেটা হবে অশিক্ষা বা কুশিক্ষা। ওহির শিক্ষাই একমাত্র শিক্ষা। ওহির শিক্ষার আলোকেই শিক্ষার নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে।
আজ বুধবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ আয়োজিত বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. কোরবান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান প্রণীত বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি সংক্রান্ত কর্মশালায় তিনি মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগের সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল ড. মো. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া। কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি, জাতীয় শিক্ষানীতি রিভিউ কমিটির আহ্বায়ক ড. মো. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান।
কর্মশালায় দেশ-বিদেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্টসহ বিশিষ্ট ব্যক্তির্বগ অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে রয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফামের্সী অনুষদের সাবেক ডিন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম আবদুর রব, উপাধ্যক্ষ ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি প্রফেসর এবিএম ফজলুল করীম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. আবুল কালাম পাটোয়ারী, প্রফেসর ড. আবু বকর রফিক আহমদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. নিজাম উদ্দিন, জাতীয় শিক্ষানীতি রিভিউ কমিটির সদস্য জনাব এম এস উল্লাহ, অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল, অধ্যক্ষ ড. আবু ইউসুফ খান, প্রিন্সিপাল আশরাফুল হক, ইউএসএ থেকে প্রফেসর ড. রুহুল আমিন, প্রিন্সিপাল নূরুন্নিসা সিদ্দিকা, অধ্যাপিকা ফেরদাউস আরা খানম, তুরস্ক থেকে ড. হাফিজুর রহমান প্রমুখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, প্রথম নাযিলকৃত ৫টি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পড়তে বলেছেন। পড়া মানেই শিক্ষা। বুঝে পড়ার নামই হচ্ছে শিক্ষা। তিনি বলেন, কুরআনে আল্লাহর নামে শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। তার নাম বাদ দিয়ে পড়াশুনা ভিত্তিহীন। এটা শিক্ষা হতে পারেন না। অশিক্ষা বা কুশিক্ষা। শিক্ষা মানেই ওহির শিক্ষা, আল্লাহর দেয়া শিক্ষা। তিনি কুরআনের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আল্লাহ নেয়ামত দিয়েছেন। তার নাম স্মরণ করা। তার নামে শিক্ষা করা উচিত। যার নেয়ামত খায়, তার কথা স্মরণ না করা নিমক হারামী করা।
অধ্যাপক মুজিব বলেন, ওহির শিক্ষাই একমাত্র শিক্ষা। যার মাধ্যমে দুনিয়ার জীনব ও আখেরাতের জীবন সফল হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা কোন শিক্ষা চাই? কোন শিক্ষা জাতিকে দিতে চাই? আখেরাতের নাজাতে যার মাধ্যমে পাবো, আমরা সেই শিক্ষাই চাই। সেই জন্যই শিক্ষানীতির প্রস্তাবনা তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জাতিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে, তাদের সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। সেই আলোকে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। সেই লোক তৈরি করতে হবে। তারাই বাস্তবায়ণ করতে পারবে। একদিকে ইসলামী শিক্ষানীতি অন্য দিকে লোক তৈরির করা। তিনি আরো বলেন, দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য ৩টি বিষয় দরকার। প্রথমত লোক তৈরি করতে হবে, জনমত গঠন করতে হবে, তারপর আল্লাহর সাহায্য। তখনই বিজয় আসবে। এটাই আল্লাহ ফয়সালা।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দেশে নানামুখি শিক্ষা ধারা রয়েছে। সমন্বিতভাবে প্রতিটি ধারার ব্যাপারে গাইডলাইন থাকতে হবে। ইসলামী শিক্ষার পরিপূর্ণ রূপরেখা তৈরি করে দেশের জন্য শিক্ষানীতি চুড়ান্ত করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এই নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিপ্লব ছাড়া ইসলামী আন্দোলন সফল হতে পারে না। তিনি বলেন, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সফল হতে না পারলে পতাকা মানচিত্র ও মানুষ সবই থাকবে, কিন্তু নৈতিকতার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
প্রফেসর চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। শিক্ষানীতি কখনও সেক্যুলার হতে পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনও সেক্যুলার হতে পারে না। একজন মুসলমান কখনও সেক্যুলার চরিত্রের হতে পারে না। কোন মুসলিম জনগোষ্ঠির শিক্ষানীতিও সেক্যুলার হতে পারে না। তাই এ দেশের শিক্ষানীতিও হতে হবে, অধিকাংশ মানুষের চিন্তা চেতনা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন, সর্বপর্যায়ে নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। নৈতিক শিক্ষার প্রথম জায়গা হচ্ছে প্যারেন্টিং। কুরআনে ফ্যামিলি লাইফ নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই শিক্ষানীতিতে প্যারেন্টিং নিয়ে গাইলাইন থাকা দরকার।
প্রফেসর ড. আবদুর রব বলেন, শিক্ষানীতিটি মৌলিক গাইড লাইন হিসেবে বিবেচিত হবে। জাতীয় শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হবে এই নীতিমালা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. আবুল কালাম পাটোয়ারী বলেন, শিক্ষায় এখন নৈতিকতা নেই। সর্বপর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগে নূন্যতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা দরকার। শিক্ষকদের নৈতিকতা না থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা আসতে পারে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, শিক্ষানীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক। প্রত্যেকটা পৃথক পৃথক বিষয়। কম কথায় বেশী বিষয় বলা হয় নীতিমালায়। একটি আদর্শ ও দক্ষ জনগোষ্ঠি গড়ে তুলতে এই নীতিমালা গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর কুরবান আলী বলেন, শিক্ষানীতির মূল মডেল তৈরি করা হয়েছে। তারপর সময়ের প্রেক্ষিতে তা পরিমার্জন করতে হবে। বতর্মান ২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে কারিকুলামে শিশুরা ইসলামী শিক্ষা পাচ্ছে না। এটা উদ্বেগজনক। জাতিকে ইসলামবিমুখ করার এই প্রক্রিয়া গ্রহনযোগ্য নয়।