এদেশে তো প্রায় সবাই মুসলিম। তো মুসলিমদেরকে আবার কীসের দাওয়াত দেয় জামায়াত? জামায়াতে ইসলামের প্রতি এটি একটি কমন প্রশ্ন। এই ব্যাপারে জামায়াতের কথা হলো জামায়াত বেসিক্যালি তিনটি বিষয়ে দাওয়াত দেয়।
আমাদের দাওয়াতকে সহজ ও সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাইলে নিম্নলিখিত তিনটি পয়েন্টে বলা যায়।
১. আমরা সাধারণত সকল মানুষকে এবং বিশেষভাবে মুসলমানদেরকে আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ করার আহবান জানাই।
২. ইসলাম গ্রহণ করার কিংবা ইসলাম মেনে নেওয়ার কথা যারাই দাবী করেন, তাদের সকলের প্রতি আমাদের আহবান এই যে, আপনারা আপনাদের বাস্তব জীবন হতে মুনাফিকী ও কর্ম-বৈষম্য দূর করুন এবং মুসলমান হওয়ার দাবী করলে খাঁটি মুসলমান হতে ও ইসলামের পূর্ণ আদর্শবান হতে প্রস্তুত হোন।
৩. মানব-জীবনের যে ব্যবস্হা আজ বাতিলপন্থী ও ফাসিক কাফিরদের নেতৃত্বের আমূল পরিবর্তন করতে হবে এবং নেতৃত্ব আদর্শ ও বাস্তব উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহর নেক বান্দাহদের হাতে সোপর্দ করতে হবে।
খেয়াল করুন প্রিয় ভাই, আমরা মুসলিম অথচ আমাদের দেশ ইসলামী বিধান অনুসারে পরিচালিত হয় না। আমরা মুসলিম দাবি করি অথচ আমাদের চরিত্র দেখে সেটা বুঝা যায় না। এটাই আমাদের আন্দোলনের বেসিক কারণ।
আমরা প্রথমত একজন মানুষকে আল্লাহর পূর্ণ অনুগত হতে আহবান জানাই। এই আনুগত্যের মানে হলো নামাজের মধ্যে আমরা যেভাবে আল্লাহকে পূর্ণভাবে মানি সেভাবে সবসময় আল্লাহর অনুগত থাকা। আল্লাহর বিধানকে পুরোপুরি অনুসরণ করা। সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। সকল ফরজ কাজ অবশ্যই করা।
এতটুকু মেনে নেয়ার পর আমাদের দ্বিতীয় আহবান হলো মুনাফিকি তথা কর্মীয় বৈসাদৃশ্য দূর করুন। আপনি যা মানেন তার বিপরীত কিছু দেখলে আপনার শরীরে গা-জ্বালা করাটাই স্বাভাবিক। যদি গা-জ্বালা না করে তাহলে বুঝা যায় আপনার আপনার মেনে নেওয়াটা সঠিকভাবে হয় নি। পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা পরিবেশ দেখলে আপনার ঘৃণা হওয়া উচিত, তেমনি সুদ, ঘুষ, মজুতদারি, জুলুম ইত্যাদিতে আপনার ঘৃণা হওয়া উচিত। যদি ঘৃণা না হয়ে ঐসব কাজে আপনি জড়িত থাকেন তবে এটাই কর্মীয় বৈসাদৃশ্য।
আবার আল্লাহ তায়ালা বিধান দিয়েছেন এবং দায়িত্ব দিয়েছেন সেই বিধান অনুসারে সমাজ/ রাষ্ট্র / পরিবার পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু আপনি এমন একটি সমাজে বাস করেন এখানে ৯০% মুসলিম হলেও সেই সমাজ ইসলাম অনুসারে পরিচালিত হয় না। আপনি আল্লাহকে মানেন, নামাজ-রোজা করেন অথচ সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠা না দেখেও যদি আপনার অন্তর না পুড়ে তবে এটা মুনাফিকি। আমরা এই মুনাফিকি আচরণ থেকে সরে আসার জন্য আহবান জানাই। আমরা আপনাকে সেভাবে বলতে চাই, আল্লাহ তায়ালা যেভাবে বলেছেন, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো। অর্থাৎ ইসলামের কিছু অংশ মানবেন কিছু মানবেন না, এমন যেন না হয়।
এই সমাজের মুসলিমদের প্রতি আমাদের সর্বশেষ আহবান হলো দ্বীন প্রতিষ্ঠার আহবান। এই সমাজের নেতৃত্ব আমরা এমন লোকদের হাতে তুলে দিতে চাই যারা এই সমাজকে আল্লাহর বিধান অনুসারে পরিচালিত করবে। এজন্য তাকওয়াবান লোকদের আমরা নির্বাচিত করবো আমাদের নেতা হিসেবে।
মুসলিমদের নেতা হবে মুসলিমদের পছন্দ অনুসারে। কেউ জোর করে মুসলিমদের নেতা হলে তার পরিণতি ভালো নয়। আমরা এই সমাজের মুসলিমদের তাদের নেতা বাছাইয়ের সুযোগ করে দিতে চাই।
জোর করে মুসলিমদের নেতা হওয়া জালিমদের ব্যাপারে আলী রা. থেকে বর্ণিত হাদিস হলো, রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি কোন কওমের লোকদের অনুমোদন ছাড়াই তাদের নেতা হয় তার উপর আল্লাহ, সকল ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ। তার কোন ফরয বা নাফ্ল ‘ইবাদাত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। [আবু দাউদ ২০৩৪]
ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সা. বলেন, তিন ব্যক্তির সালাত তাদের মাথার এক বিঘত উপরেও উঠে না : যে ব্যক্তি জনগণের অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও তাদের নেতৃত্ব দেয়, যে নারী তাঁর স্বামীর অসন্তুষ্টিসহ রাত যাপন করে এবং পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী দু’ ভাই। [ইবনে মাজাহ ৯৭১]
আবূ উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সা. বলেন, “তিন ব্যক্তির নামায তাদের কান অতিক্রম করে না; প্রথম হল, পলাতক ক্রীতদাস; যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। দ্বিতীয় হল, এমন মহিলা যার স্বামী তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে এবং তৃতীয় হল, সেই জাতির নেতা যাকে ঐ লোকেরা অপছন্দ করে।” (তিরমিযী ৩৬০, সহীহ তারগীব ৪৮৭ নং)
এই হচ্ছে আমাদের দাওয়াতের কারণ। আশা করি আপনারা এসব বিষয়ের সাথে একমত হবেন। যারা এখনো জামায়াতে ইসলামীর সাথে যুক্ত হননি তাদের যুক্ত হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
জামায়াতকে জানুন। জামায়াতে যোগ দিন।
#গণসংযোগ_পক্ষ
#১মার্চ_১৫মার্চ