বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের ঈমানের দাবি হচ্ছে দ্বীন ইসলামকে সমাজ ও রাষ্ট্রে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সমগ্র বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র। সুতরাং এই ময়দানে যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার এই কাফেলায় যুক্ত আছেন, দায়িত্ব পালন করছেন অবশ্যই আপনারা এদেশে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসেনানী। অতীতে কোনো প্রকার ভয়ভীতি আপনাদেরকে দুর্বল করতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না ইনশাআল্লাহ। এবারের গণসংযোগ পক্ষে আমাদের প্রিয় সংগঠন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার সকল মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে ইসলামের সু-মহান আদর্শের দাওয়াত পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে আমি বিশ্বাস করি ঢাকা মহানগরী দক্ষিণে আমরা মজবুত সংগঠন ও দুর্বার গণভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর রাসুলের সরাসরি নির্দেশনা হচ্ছে, সমাজের কোথাও অন্যায় কাজ হতে দেখলে তা প্রতিহত করতে হবে, প্রয়োজনে চিৎকার করে প্রতিবাদ করতে হবে, একেবারে অক্ষম হলে কমপক্ষে মন থেকে ঘৃণা প্রকাশ করতে হবে, যদিও এটা দুর্বলতম ঈমানের পরিচয়। বর্তমান সরকার জনগণের হক বা অধিকারকে হরণ করেছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী সহ জনগণের উপর অন্যায় ও জুলুম অব্যাহত রেখেছে এমতাবস্থায় আমাদের এই অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে জনগণের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিয়ত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মু. দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন। দারস পেশ করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য, থানা আমীর ও সেক্রেটারি সহ মহানগরীর সকল ওয়ার্ডের সভাপতি ও সেক্রেটারিবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন একটি দল থাকতে হবে, যাদের কাজ হবে ভালো কাজে হুকুম দেওয়া ও মন্দ কাজে নিষেধ করা। আল্লাহ তায়ালার মূল বক্তব্য হচ্ছে তোমরা আমার গোলামী করো। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ হচ্ছে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করা বা ডাকা। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, যত বিপদই আসুক না কেন নিজেকে সত্যবাদী মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে পিছপা হওয়া যাবে না। আমি আল্লাহর আইন মানি অন্য কারো আইনকে পরোয়া করি না। আমাদের ঈমান থাকতে হবে পাশাপাশি সাহস থাকা খুবই জরুরি। যাদের সাহস নেই, দুর্বল-কাপুরুষ তাদের জন্য আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করা সম্ভব নয়। এজন্য সাহস নিয়ে ময়দানে বীরের বেশে উত্তীর্ণ হতে হবে। আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য কেবল সেইসব লোকই যোগ্য যারা বাতাসের গতিতে উড়ে যায় না বরং ঐ বাতাসের গতিকেই উল্টে দিয়ে সম্মুখে ছুটে চলে। যারা নদীর স্রোতে ভেঁসে যায় সেই সব দুর্বল লোকের জন্য এই ইসলামী আন্দোলন নয়। তাই আমাদেরকে সাহসিকতার সাথে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মূল দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ব্যাপক গণ ভিত্তি অর্জনে সংগঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেক জনশক্তিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। দাওয়াতী কাজের জন্য আমরা এই মহানগরীর প্রত্যেক বাসা বাড়িতে ছুটে যাবো। নিজেদের ব্যস্ততার মাঝে অথবা সাপ্তাহিক ছুটির দিন সমূহে আমরা ব্যাপকভিত্তিক দাওয়াতি অভিযান পরিচালনা করবো ইনশাআল্লাহ। সংগঠনের প্রতিটি কার্যক্রমকে সুনিপুণভাবে সম্পন্ন করতে প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রতিদিনের কাজকে মনিটরিং করে করে পুরো মহানগরী এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের সুমহান দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। আজকের এই দায়িত্বশীল সমাবেশে যুক্ত সকলকে “গণসংযোগ পক্ষের” প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, মহান আল্লাহর নিকট মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। এই প্রচার ও প্রসারের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে দাওয়াত। সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মাণে দাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান সমাজ ক্রমশঃ এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ দুর্নীতি ও অপসংস্কৃতি জেঁকে বসেছে। ন্যায়-নীতি এখানে বিলুপ্ত প্রায়। যুলুম-অত্যাচার, গুম, হত্যা, লুণ্ঠন প্রভৃতি পাপাচারের বিষবাষ্পে জাতি আজ দিশেহারা। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির কোপানল থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে ইসলামের সুমহান আদর্শের ভিত্তিতে একটি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে আমাদের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।