বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি, বাউফলের গণমানুষের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ আজ বাউফল উপজেলায় তরুণ ও যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি আজ চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবর্তনে তরুণ-যুবকদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। রাসুল (সা) এর আদর্শ বা তার দেখানো পথে তরুণ ও যুব সমাজকে অনুপ্রাণিত করে আমরা বাংলাদেশে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। তরুণ যুবকদের ধ্বংস করে দেওয়া মানেই হচ্ছে একটি রাষ্ট্র-সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে শেষ করে দেওয়া। একটি মহল এদেশের তরুণ-যুবকদের চরিত্র ধ্বংস করে দিতে নানা ষড়যন্ত্রে বিভোর। তারা অশ্লীলতা বেহায়াপনার মাঝে তরুণ-তরুণীকে ডুবিয়ে দিয়ে পুরো সমাজ ও জাতিকে ধ্বংস করে দিতে চাই। কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা জাতিকে ধ্বংস করার জন্য শিশু-বৃদ্ধকে স্মরণে রাখা হয়না, বরং সেখানকার তরুণ-যুবকদের টার্গেট করে পরিকল্পনা সাঁজানো হয়। আমরা বহুদিন ধরে লক্ষ্য করছি, প্রিয় বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে স্ব-গৌরবে মাথা উঁচু করে যাতে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য নানা অপকৌশলে তরুণ-যুবকদের মাঝে অপসংস্কৃতি, নোংরামী, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র তুলে দেওয়া সহ বিভিন্নভাবে এই যুবশক্তিকে অঙ্কুরেই শেষ করে দেওয়ার কাজ চলছে। তরুণ যুবকদের অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে দিয়ে গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে নির্মূল করার চক্রান্ত বিদ্যমান। এই স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির পাঁচ দফা কর্মসূচি নিয়ে এদেশের তরুণ যুব সমাজকে সুন্দর একটি আদর্শের ভিত্তিতে, মেধার বিকাশে ভূমিকা পালন করছে। প্রিয় নবী (সা) এর আদর্শ বুকে ধারণ করে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে অদ্যবধি ছাত্রশিবির দেশের তরুণ যুবকদের সম্পৃক্ত করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাউফল উপজেলা শাখা আয়োজিত “তরুণ ও যুব সমাবেশ” অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাউফল পূর্ব সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাউফল উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক খালিদুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পটুয়াখালী জেলা সভাপতি আলী আজগর, সাবেক জেলা সভাপতি মাহফুজ হোসাইন, কবির হুসাইন, সাবেক আইন সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, বাউফল উপজেলা জামায়াতের বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল্লাহ, ইসলামী ছাত্রশিবির বাউফল দক্ষিণ সভাপতি জুবায়ের হুসাইন, বাউফল পশ্চিম সভাপতি হাফেজ আরিফুর রহমান, বাউফল উত্তর সভাপতি কামরুল ইসলাম সহ উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ছাত্রশিবির একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, যেখানে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন মেধাভিত্তিক শিক্ষা চর্চা করে এই তরুণ যুবকরা সমাজের মানুষকে সচেতন করতে চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তরুণ যুবক ছাত্র সমাজের জন্য ইসলামী ছাত্রশিবির অপরিহার্য বাস্তবতা। স্কুল-কলেজ, মাদরাসা এর বাহিরে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান, ভূগোল, তথ্য প্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা নিজেকে গড়ে তোলেন। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়ে ওঠা একজন জেনারেল শিক্ষিত শিবির কর্মী সংগঠনের সিলেবাস শেষে শুদ্ধভাবে কুরআন-হাদিসের চর্চা করে নিজ পরিবারে সম্মান, সমাজ ও দেশের জন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হচ্ছেন। আজকের বাস্তবতায় শুধু তরুণ যুবকের কাছে নয়, তার অভিভাবক আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীরা ছাত্রশিবিরের কাছে নিজেদের সম্মান অটুট রাখার স্থান মনে করছেন। ২০২৩ সালের শিক্ষা ব্যবস্থায় যেসব নাস্তিকতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যেভাবে ধর্মীয় উগ্রতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পৌত্তলিকতা ও সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দিয়ে, অশ্লীলতা বেহায়াপনা ছড়িয়ে দিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্র ছাত্রীদের ঈমান বিশ্বাসকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ আরও বলেন, এমনকি সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বলেছেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। বর্তমান সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যেমন আকাশছোঁয়া অন্যদিকে সংসারের দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের সাধারণ জনগণ। সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, ভ্রান্ত নীতির ফলে দেশের অর্থনীতিতে এবং জনজীবনে তীব্র সংকট চলছে। চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ সব দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন যখন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় যখন লাগামহীনভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যখন মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হচ্ছে, কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। দেশের এই ক্রান্তিকালে তরুণ যুবকদের সচেতন থাকতে হবে। দেশের মানুষের পাশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অতীতে ছিলো, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। আগামী দিনে যেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা জনগণের কল্যাণে পাশে থাকতে পারি। সেই রাষ্ট্র শক্তির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে তিনি তরুণ যুব সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহ্বান জানান।