বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, কোন একটি এলাকায় গণভিত্তি মজবুত থাকলে সেখানে ইসলামের বিজয় তরান্বিত হবে। আল্লাহর রাসূল (সা) দীর্ঘদিন দাওয়াতি কাজ করার পরেও ইসলামের প্রথমিক যুগে মক্কায় গণভিত্তি অর্জন করতে পারেননি কিন্তু মদিনায় তিনি গণভিত্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মদিনার জনগণের ইসলামের পতাকাতলে অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক। ফলে আল্লাহর রাসূলের নেতৃত্বে মদিনায় প্রথমে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। নবগঠিত রাষ্ট্র মদিনার উপরে শত্রুরা আক্রমন করেছে, আঘাত এসেছে। মদিনার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাসূল (সা.) তা প্রতিহত করে দ্বীনের বিজয়কে আরও বিস্তৃত করেছিলেন। এজন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের রাজধানীর প্রত্যেক মহল্লায় মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। মানবতার সেবা ও ব্যাপকভাবে সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে জামায়াতের পতাকাতলে সম্পৃক্ত করে গণভিত্তি অর্জন করতে হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত থানা মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্যদের শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। শিক্ষা শিবিরে দারসুল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. মো. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহা. দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, বাংলাদেশে ইসলামকে বিজয়ী শক্তিতে পরিনত করার জন্য রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ, খোলাফায়ে রাশেদার অনুসৃত পদ্ধতি আমাদের অনুসরণ করতে হবে একইসাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় শহরে ইসলামী মুভমেন্ট কিভাবে বিজয়ী হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তুরস্কের ইস্তাম্বুল, পাকিস্তানের করাচী সহ বিশ্বের বড় বড় শহরে আজ ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বিজয়ী হচ্ছেন। তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের কিংবদন্তি ড. নাজিবুদ্দিন আরবাকানের কার্যক্রম ও এসকল বড় বড় শহরের ইসলামী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, তারা সমাজকল্যাণ কার্যক্রমের মাধ্যমেই মূলত জনগণের মনে স্থান করে নিচ্ছেন। আমরাও যদি রাজধানীর তৃনমূল স্তরে গিয়ে সকল শ্রেণিপ্রেশার মানুষের মাঝে সামাজিক কাজের মাধ্যমে সেবা প্রদান করতে পারি তাহলে এদেশেও ইসলামী আন্দোলন বিজয়ী শক্তিতে পরিনত হবে ইনশাআল্লাহ। ফলে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সোশ্যাল ও মোরাল বৈশিষ্ট্য অর্জন করে জনগণের খেদমত করতে হবে।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, আল্লাহর গোলাম হিসেবে আমাদেরকে কুরআন ভালোভাবে জানতে হবে এবং তা সমাজ ও রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আম্বিয়ায়ে কেরাম যে আদর্শ পৃথিবীতে কায়েম করার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন বাংলাদেশের বুকে সেই একই আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ জামায়াতে ইসলামী করে যাচ্ছে। আদর্শবাদী দলের পতাকাবাহী হওয়ার কারণে জামায়াতের দায়িত্বশীলদের একটি আদর্শবাদি দলের পতনের কারণ সম্পর্কে নিবিড় জ্ঞান রাখতে হবে এবং তার প্রতিকারের জন্য কাজ করতে হবে। জামায়াতের সাবেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়িয়ে শাহাদাতের অমিয় সুধা পাণ করেছেন তবুও নিজ আদর্শে অটল ছিলেন। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জামায়াতের অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে বন্দি রয়েছেন তবুও কারো সাথে আপোষ করেননি। শত জুলুম ও অত্যাচারের মাঝেও আমাদেরকে দৃঢ়ভাবে দ্বীনের এ মহান কাজকে আঞ্জাম দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, তৃণমূলে সংগঠন মজবুত করার মাধ্যমে আমাদেরকে দেশের দেশের সামগ্রিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সকলের কাছে জামায়াতের আহবান পৌঁছাতে হবে। সমাজের গঠনমূলক প্রতিটি কাজে জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত হতে হবে। পরামর্শের ভিত্তিতে সংগঠন পরিচালনা ও জনশক্তির মাঝে চিন্তার ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জনগণের কল্যাণে গণমুখি নেতৃত্ব অপরিহার্য ফলে গণমুখি নেতৃত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জামায়াতের জনশক্তিদের দাওয়াতী কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে যেন তা আমাদের নিত্যদিনের কাজ হিসেবে পরিণত হয়। সমাজের প্রভাবশালী ব্যাক্তি সহ সকলের সাথে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও হৃদ্যতা আরও সৃদৃঢ় করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কাজে সকল ধর্মপ্রান মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।