বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আজ তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে তাতে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। আল্লাহ বলেছেন আমি যখন প্রকম্পন সৃষ্টি করি তা কি তোমরা লক্ষ্য করো না। এরপরেও এক শ্রেণির মানুষ আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, কুরআন মানে না। কিন্তু মৃত্যুবরণ করতে হবে তা প্রত্যেক ব্যক্তিই অকপটে স্বীকার করে। আমরা মানুষ হিসেবে খুবই দুর্বল, সুতরাং মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করে আমাদের পরিপূর্ণ মুমিন হতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতিবাজ, ভোট ডাকাত ও অবৈধ সরকার। তারা দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করেছে। দেশকে গভীর সংকটে নিমজ্জিত করেছে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পুুনর্গঠন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাজপথের একদফা আন্দোলনে সাহসিকতার সাথে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তিনি সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
আজ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত সহযোগী সদস্য সম্মেলন-২০২৩ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ ও মোবারক হোসাইন। সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবু ফাহিম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনে উপস্থিত সহযোগীদের হাতে ১৪ হাজার রিপোর্ট বই সহ অন্যান্য উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হবে। বিভিন্ন স্পটে গ্রুপ ভিত্তিক উপস্থিত হয়ে অনলাইনের মাধ্যমে সহযোগীবৃন্দ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের তাকওয়া অর্জনের কথা বলেছেন। পৃথিবীতে মানুষ ব্যবসায় লাভ ভালো বুঝে, এজন্যই আল্লাহ তায়া’লা কুরআনে প্রিয় বান্দাদের উত্তম ব্যবসার কথা বলেছেন। কারণ ইসলামের আদর্শিক ব্যবসাই হচ্ছে পরকালীন মুক্তির নিশ্চয়তা। মানব জাতির ইতিহাসে দু’টি ধারা রয়েছে, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, শাসক-শোষিত। আমরা ন্যায়ের সাথে আছি, ইতিবাচক ধারার সাথে আছি। আমরা নবী ও রাসূলদের উত্তরসূরী, হযরত আবুবকর, ওমর, উসমান ও আলীর উত্তরসূরি। যারা যুগে যুগে জীবন বিলিয়ে দিয়ে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীর বাঁকে বাঁকে আজকে মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য তারা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় আমাদেরকে বিপ্লবী চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। আমাদের মূল পরিচয় মু’মিন, মুসলমান। কুরআনের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, যারা সৎ কাজের আদেশ দেয়, অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার কথা বলে তারাই সফলকাম। জামায়াত সেই দল যারা এই কাজটিই করে। ফলে আমরা সফলকাম আলহামদুদিল্লাহ। মুমিনদের ভয়ের কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, রাসূল (সা) যেমন আরবের মানুষের দ্বারে দ্বারে ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত পৌছে দিয়েছিলেন, আমাদেরও মানুষের কাছে এই দাওয়াত পৌছে দিতে হবে। এটা নবীওয়ালা দায়িত্ব, এটা ফরজিয়াত। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামীর মতো আন্দোলন না থাকলে আল্লাহর পথে দানের ফরজিয়াত কিভাবে পালন করতাম। পৃথিবীর অনেক দেশে মানুষ এ ধরনের আন্দোলন সন্ধান করেন। এই আন্দোলন একটা রহমত। আমাদের ইসলামের সঠিক ধারণা ও ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। উত্তম জিহাদ হচ্ছে জালেম শাসকের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলা। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ঈমানী দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব পালনে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ বলেন, আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে দুনিয়ার জীবন উপভোগ করার জন্য নয়। খিলাফতের জিম্মাদার হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। জামায়াত এদেশে আল্লাহর বিধান ইসলাম প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য ইসলামের সুমহান আদর্শকে আমাদের জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। গণমানুষের কাছে ইসলামের অর্থনৈতিক দিক, ইসলামের আদর্শিক রাজনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা তুলে ধরার মাধ্যমে সবার কাছে জামায়াতের দাওয়াত দিয়ে আগামীর ন্যায় ইনসাফ ভিত্তিক দেশ গড়তে সহযোগী সদস্যদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। জামায়াত কর্মী মানেই সমাজ কর্মী। সামাজিক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে। মানুষের বিপদে আপদে এগিয়ে আসতে হবে। বৈশ্বিক পরিবর্তন বার্তা দিচ্ছে, আগামীর বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে মুসলিম বিশ্ব। বাংলাদেশেও নেতৃত্বের চরম সংকট চলছে। তারও একদিন অবসান হবে, ইনশাআল্লাহ।
মোবারক হোসাইন বলেন, প্রত্যেকটি মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং সফলতার শেষ পরিণতি নির্ণয় করতে হবে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত প্রাপ্তি এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সফলতা। জামায়াতের একজন সহযোগী হিসেবে প্রত্যেককে দুনিয়ার জীবনের পরিবর্তে পরকালীন মুক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে। ইসলামী আন্দোলন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত। তিনি দেশে-বিদেশে ইসলামী আন্দোলন ও এর নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ইসলামী আন্দোলন করার কারণে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন হয়েছে। তারা হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছেন। বিনা অপরাধে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছেন। তারা কোনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি, আপোস প্রস্তাবে কর্ণপাত করেননি। আমরা সেই আন্দোলনের উত্তরসূরি। আল্লাহর দ্বীনকে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিরোধ, জুলুম নিযার্তন হবে। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের যেকোনো জুলুম নির্যাতন সহ্য ও মুকাবেলার করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সবকিছু পদানত করে ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী ও বিজয়ী আন্দোলনে পরিণত করতে হলে গণমুখি হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সহ সমাজের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। একইসাথে ন্যাচারাল লিডার হিসেবে যারা গড়ে ওঠে তাদেরকে ইসলামী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ও আন্দোলনের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য শক্তিশালী ও মজবুত সংগঠন গড়ে তুলে জনগণের মাঝে সংগঠনের কাজকে ছড়িয়ে দিতে হবে। সততা ও যোগ্যতার দিক দিয়ে নিজেদেরকে যোগ্যরূপে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর শহীদ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পদচারণায় মুখরিত ছিলো ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। সুতরাং মহানগরীর প্রতিটি ঘরে ঘরে ইসলামের আদর্শকে পৌছে দিয়ে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণকে ইসলামী আন্দোলনের রাজধানীতে পরিণত করতে হবে। জীবনকে নিয়ে পরিবর্তনের জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে। জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করতে নিজেদের পরিশুদ্ধ করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সংগঠনের কর্মী হিসেবে যে কাজ গুলো করার কথা বলছি, তা মূলত একজন ঈমানদার মুসলমানেরই কাজ। দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা কাজ করছি। যে নামাজ পড়ে মুসুল্লি হয়েছি, সেই নামাজের দাবিই হচ্ছে দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা। তাই দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ থেকে নিজেদের দূরে রাখা যাবে না। সহযোগী থেকে কর্মী হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।