বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, বিজয়ের মাত্র ২ দিন আগে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে। মূলত দেশকে মেধাশূন্য ও পরনির্ভরশীল করতেই পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি গণতান্ত্রিক ইসলামী সংগঠন, এটা প্রমানিত। যখনই আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে, কেয়ারটেকার প্রতিষ্ঠায় কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। তখনই সরকার আমীরে জামায়াতকে গ্রেফতার করেছে। জঙ্গি কোন ইস্যু নয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার আন্দোলন, কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনই প্রধান ইস্যু। তিনি বলেন, আমীরে জামায়াতকে নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র হলে, অত্যাচার জুলুম বাড়িয়ে দিয়ে সরকার যদি মনে করে, গণতন্ত্রবিহীন, ভোটারবিহীন ভাবে নিজেদের শাসন চালিয়ে যেতে পারবে। এটা ভুল চিন্তা। অলিক স্বপ্ন মাত্র। জামায়াতে ইসলামী কোনো ভুঁইফোর সংগঠন নয়। হাজার লক্ষ মানুষ জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত। জুলুম নির্যাতন বাড়িয়ে দিলে জনগণের প্রতিরোধ আরো বেশি জোরালো হবে। তিনি সবাইকে সরকার পতনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।
আজ বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোআ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মোঃ নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বেতে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন। সভা শেষে মহানগরী আমীর সকলকে নিয়ে মোনাজাত করেন।
ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের তার বক্তব্যে বলেন, জাতির বড় দুর্ভাগ্য যে, আমরা অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এক জায়গায় আসতে পারিনি। জাতীয়তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারো কাছে আমরা বাঙ্গালী, কারো কাছে বাংলাদেশী, কারো কাছে বাংলাদেশী মুসলমান। দেশের আদর্শ কী হবে, এটা নিয়েও এক জায়গায় পৌছাতে পারিনি। শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড নিয়েও একই অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ২ দিন পূর্বে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। ১৬ই ডিসেম্বরের পরও হত্যাকান্ড হয়েছে। তখনতো পাকিস্তানী বাহিনী ছিল না। কোন শক্তি সেই হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল? তার জন্য কী পাকিস্তানী বাহিনীকে দায়ি করতে পারি? তার পিছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাও দায়ি থাকতে পারে। এটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এটা বের করার দায়িত্ব ছিল স্বাধীনতা পরিবর্তী যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের। কিন্তু তারা তা করেননি। কেচো খুরতে গিয়ে হয়তো সাপ বেড়িয়ে আসতে পারে বলেই, তারা জেনে বুঝে এটা করেনি। তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের জন্য আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবী জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারও সেই তদন্ত করতে চায় না। কেননা এতে তাদের পূর্বসূরিদের দায় দায়িত্ব বেড়িয়ে আসতে পারে।
ডা. তাহের বলেন, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিস্ময়ের বিষয় আমীর জামায়াতকে উদ্ভট ও কাল্পনিক অভিযোগে পুরাতন জঙ্গি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামী জন্ম থেকেই যে কোন সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। বিশ্বব্যাপি প্রথম সারির সকল ইসলামী সংগঠন, মূলধারার ইসলামী আন্দোলন গুলো জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, সরকার বছরের পর বছর জঙ্গি সংগঠনের তথ্য উপাত্ত পাওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা কখনও জামায়াতে ইসলামীর সাথে তার সম্পৃক্ততা খুজে পায়নি।
তিনি বলেন, ডা. শফিকুর রহমান একজন সজ্জন ব্যক্তি, মানবতা প্রেমিক, অগ্রপথিক। বিগত বন্যায় যেখানে শাসক গোষ্ঠি হেলিকপ্টারে করে ঘুরেছে। সেখানে তিনি পানিতে নেমে মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। সরকার যখন লিপ সার্ভিস দিচ্ছিল, তার নেতৃত্বে জামায়াতের নেতাকর্মীরা মানুষের কাছে চালডাল পৌছে দিয়েছে। যখন বন্যায় নির্মম অবস্থা, তখন সরকার পদ্মা ব্রিজ উদ্বোধনের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে। সেই সময় জামায়াত ভিন্ন ধর্মের মানুষসহ সবাইকে কাছে টেনে নিয়েছে। সরকার যখন দুর্যোগকে উপক্ষো করেছে, তখন তিনি মানুষের জন্য নতুন ঘর তুলে দিয়েছেন। কাওমী মাদরাসা থেকে শুরু করে মসজিদ মাদরাসায় ছুটে বেড়িয়েছেন। ঠিক তাকেই ইতিহাসের নির্মমতায় জঙ্গি অপবাদে মিথ্যা অভিযোগে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে কারাগারে নেয়া হয়েছে। মূলত: দমন পীড়নের অংশ হিসেবেই আমীরে জামায়াতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে আমিরে জামায়াতের মুক্তির দাবী জানাচ্ছি। তিনি এক্ষেত্রে বিশ্ববাসী, সকল মানবতাবাদী ব্যক্তি ও সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি কুরআনের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসির কাস্টে ঝুলানো হয়েছে। আমাদের আর পিছনো ফিরে তাকানোর সময় নেই। আমাদের সব কিছু নিয়ে আমীরে জামায়াতকে মুক্ত করার ও সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আল্লাহর সাহায্য অত্যাশন্ন।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, স্বাধীনতার মাত্র ২ দিন পূর্বে ঢাকা ছিল অবরুদ্ধ। নিয়ন্ত্রন ছিল স্বাধীনতাকামীদের হাতে। সেই সময় মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে। যেসব বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীন দেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে ভূমিকা রাখবে। এই হত্যাকা-ের সমাধান এখনও হয়নি। সব সময় উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো হয়। তিনি উল্লেখ করেন, এই হত্যাকান্ডের সাথে তারাই জড়িত, যারা চায় না, এই দেশটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মমর্যাদার সাথে দাঁড়াতে পারে। এই রাষ্ট্র যেন করদ রাজ্যে পরিণত করা যায়, এই পরিকল্পনা ও চিন্তা থেকে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান অর্ন্তধান হন। তিনি ফিরে আসেননি। ইতিহাস বলে, জহির রায়হানের কাছে অনেক তথ্য ছিল, সেই তথ্য প্রকাশ পেলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসতো। এ জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে। যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, তারাই এর সাথে জড়িত। তারাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করতে পরিকল্পনা করে। সেই ধারাবাহিকতায় ডাকসুর জিএস অধ্যাপক গোলাম আযমকে ফাঁসির রায় দিয়ে জেলে রেখে হত্যা করা হয়। বুদ্ধিজীবী শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা, শহীদ মীর কাসেম আলীসহ ১০ জন শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিককে হত্যা করে। জাতি জানে, কারা কাদের এসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দেশজনতার আস্থার প্রতীক বিগ্রেডিয়ার আমান আযমী, ব্যারিস্টার আরমান, ছাত্রনেতা মুকাদ্দেসকে গুম করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ডা. শফিকুর রহমান রাজনীতিবিদ, মানবদরদী, জনগনের বন্ধু। মানুষের প্রয়োজনে দিশেহারা হয়ে মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। মানবতার ফেরীওয়ালাকে রাজনৈতিক জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি আমীরে জামায়াত ডা, শফিকুর রহমান, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস সহ সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবী করেন।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, স্বাধীনতা পূর্ব ২ দিন আগে বুদ্ধিজীবী যারা ছিলেন, তাদের বেছে বেছে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। তখন যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল এখনও তা চলমান। স্বাধীনতা পরবর্তীতে সিরাজ শিকদার, জহির রায়হানসহ অনেককে পরিকল্পতভাবে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, এখন দেশে আবার সেই বাকশাল কায়েমের প্রচেষ্টা চলছে। আওয়ামী অপশক্তিকে বলবো, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন, অতীতে নমরুদ ফেরাউন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, আপনাদের জন্যও সেই পরিনতি অপেক্ষা করছে। ভয়াবহ জিল্লতি হয়েছিল।
আবদুস সবুর ফকির বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের কুশিলবরা এখনও সক্রিয়। এখনও দেশপ্রেমিক মানুষকে গুম করা হচ্ছে, মায়ের বুক খালি করা হচ্ছে, সন্তানদের পিতা স্নেহ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্ত হাতে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। সেই ষড়যন্ত্র এখনও বহাল রয়েছে। সেই নীলনকশা অনুযায়ী শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা, শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের সাহায্য ছাড়া যেন এই দেশ দাড়াতে না পারে, সেজন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। এর সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়াজন। তিনি বলেন, সাধারণ জনগনকে সাথে নিয়ে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা করা হবে। গুম, গুলি করে হত্যা, গ্রেফতার নির্যাতন করে জনগনের আন্দোলন দমিয়ে দিবেন, এটা যারা ভাবছেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তিনি গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবী জানান।