বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমেই দেশে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতি চরম উৎতপ্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় অফিস সরকারি সিদ্ধান্তে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ একটা সমাবেশ, অবস্থানকে অশান্ত করে তোলা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাখির মতো গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। গভীর রাতে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আনা হয়েছে। আমরা মনে করি এর শেষ পরিণতি আওয়ামী সরকারের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক হবে। বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার জনগনের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। অত্যাচারী জালেম শাসকের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলাই সর্বোত্তম জিহাদ। জামায়াত, বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী ডান বাম, জোট সকলকে সাথে নিয়ে যুগপৎ দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতিকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে হবে। সংগ্রাম করে জাতিকে মুক্ত করার মহান দায়িত্ব পালনে আগামী দিনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে দেশের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা) কখনো আরাম আয়েশে জীবন অতিবাহিত করেননি। জীবনের সবকিছু উজাড় করে দিয়ে মহান আল্লাহর দেওয়া কুরআনে বর্ণিত দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যাকুল ছিলেন। এভাবে নিজের দুনিয়াবী সকল চাওয়া-পাওয়া, এমনকি মানবিক সব চাওয়াকে তিনি উজাড় করে দিয়েছেন। তিনি সর্বদা মানুষের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা, সমাজ-দেশ-রাষ্ট্রে সাম্য ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে মুহাম্মদ (সা) নিজেকে উজাড় করে মানব সভ্যতায় দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গিয়েছেন। তবুও রসূলের (সা) একটা মূহুর্ত তার দুশমনদের ষড়যন্ত্রের বাহিরে ছিলো না। প্রতি পদে পদে দুশমনরা কাটার মতো প্রিয় নবীর পায়ে লেগে থাকতো। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করার পরেও তাকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া হয়নি। সেখানেও নানা যাদুটোনা ষড়যন্ত্রের জাল পেতে রাখা হয়েছিল। তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। হাজার হাজার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল মদিনা রাষ্ট্রের নায়ক প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা) এর বিরুদ্ধে।
শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে মজলিসে শূরা সম্মেলন ও শপথ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির। উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি ড. এডভোকেট হেলাল উদ্দিন, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য মোকাররম হোসেন খান, মাওলানা ফরিদ হোসেন প্রমুখ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামের এই সুমহান দায়িত্ব যারা পালনে সক্রিয় থাকবেন, তাদেরও এরকম নানাবিধ ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে সম্মুখে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী রাসূলদের কাছে যে আমানত নাযিল করা হয়েছে, সেই একই আমানত আমরা বহন করছি। বিশ্বাস রাখতে একাজের মাধ্যমেই আমার পূর্ণ সফলতা অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদেরকে শয়তানের কবল থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে হবে। আমাদের ঈমান ও যোগ্যতার ব্যাপারে যেন শয়তান আমাদের মনে দূর্বলতা তৈরি না করতে পারে। মহান আল্লাহ যাকে সম্মানিত করতে চান, তিনি তাকে সম্মানিত করেন। আবার যাকে লাঞ্ছিত করতে চান, তিনি তাকে লাঞ্ছিত করেন। এই সম্মান পাওয়া এবং না পাওয়ার মানদন্ড হচ্ছে, আল্লাহর কিতাবকে মানা এবং না মানা। যারা আল্লাহর বিধানকে মানবে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মান পাবেন। আর যারা মানবেন না, তারা সময়ের ব্যবধানে অপমানিত-লাঞ্ছিত হবেন এটা নিশ্চিত। স্বয়ং আল্লাহ তাদের উপরে লানত বর্ষিত করবেন। দেশের যারা শাসক আছেন, তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে হেদায়াতের দোয়া করি। কিন্তু তারা যদি ফিরে না এসে অনবরত মানুষের উপরে জুলুম-নির্যাতন চালাতেই থাকেন, তাহলে আল্লাহর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আমরা রইলাম। তিনি উল্লেখ করেন, এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নয়। অবিলম্বে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সহ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার সকলকে মুক্তি দিতে হবে। এই ফ্যাসিস্ট সরকার জামায়াতের নেতা-কর্মীদের উপর জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। জুলুম-নির্যাতন করে জামায়াতে ইসলামীর কণ্ঠরোধ করা যাবেনা বলে তিনি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন। তিনি অবিলম্বে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এটিএম আজহারুল ইসলাম, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান। দেশের বরেণ্য আলেমদেরকে মাসের পর মাস মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তিনি মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি কাজী ইবরাহীম, মুফতি আমীর হামজাসহ আটক ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও আলেম-ওলামাদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সংগঠনের ইতিহাসে শপথ গ্রহণ একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। সংগঠনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা যেমন আবেগ প্রববন থাকি। তেমনি অন্যদিক থেকে আল্লাহর সামনে শপথ গ্রহণ, অঙ্গিকার করার মধ্য দিয়ে একটি ভীতিও আমাদের মাঝে থাকে। ইসলামী আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখতে আজ এখানে মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে যারা শপথ নিয়েছি, এর মাধ্যমে মূলত আমরা আল্লাহ তালার সামনেই অঙ্গিকারাবদ্ধ হলাম। দুনিয়াব্যাপী জুলুম নিপীড়নের মধ্য দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছে। এই সংগ্রামের জন্য সব সময় একদল ডেডিকেটেড, একনিষ্ট ও ত্যাগী মানুষের প্রয়োজন। যারা সব কাজে আল্লাহ ও তার রাসূল (সা:) এর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামীই সেই ত্যাগের জন্য নিজেদের উপস্থাপন করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের সম্মানিত মজলিসে শূরার সদস্যদের শপথ গ্রহণের এই মহত অধিবেশনকে মহান আল্লাহর তার দ্বীনের জন্য তিনি কবুল করুন। আমীন। আজ বাংলাদেশ এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সম্মানিত মজলিশে শূরার সদস্যগণ ইকামাতে দ্বীনের একাজকে আরও বেগবান করার জন্য আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে শপথ নিচ্ছেন, এজন্য তাদের প্রতিও বিশেষ দরদ-ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি। তারা যেন দ্বীনের এ শপথের উপরে নিজেদের মজবুত ও দৃঢ় রাখতে সক্ষম হন এই দোয়া করছি।