বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর হিসেবে শপথ নিয়েছেন নূরুল ইসলাম বুলবুল। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এক মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শপথ বাক্য পাঠ করান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় দেয়া বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে আজ বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। এজন্য নানা কালা কানুন তৈরি করা হয়েছে। অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারী মহল থেকে অর্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। তারা দুর্নীতি, লুটপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। মূলত: এ দেশকে ব্যর্থ অর্থনীতির রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশের এই অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বসে থাকতে পারে না। নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ন আন্দোলনের মাধ্যমে এই জুলুমবাজ সরকারের বিদায় জানাতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের এই আন্দোলন হবে যৌক্তিক, নিয়মতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ন। কোন বদ লোক যদি আমাদের এই আন্দোলন বিভ্রান্ত করতে আসে, তাহলে তা শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে। রাজধানীর নেতাকর্মীদের যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে তাহলে সরকারের বিদায় ঘন্টা সময় মতোই বাজবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শূরার বিশেষ অধিবেশনে মহানগরী আমীরের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ও ঢাকা মহানগরী অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা এটিএম মাসুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভুইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, দেলওয়ার হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য মোকাররম হোসেন, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন প্রমূখ।
উল্লেখ্য, রুকনদের গোপন ভোটে ২০২৩-২০২৪ কার্যকালের জন্য ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নির্বাচিত হয়েছেন মু. নূরুল ইসলাম বুলবুল।
ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের ভালোবাসাটা এমন হউক যা আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন। আমাদের সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো হতে হবে। সকল মুলসমান একটি বিশ্ব। দাওয়াতের জন্য কোন নির্দিষ্ট এলাকা নেই। তিনি বলেন, ৯২% শতাংশ মুসলমানের দেশ, বাংলাদেশ। ব্যক্তিগতভাবে ইসলাম পালনের পথ সংকোচিত হয়ে আসছে। এখন তাফসির মাহফিলগুলোতেও সঠিকভাবে হক কথা বলা যাবে না। সম্প্রতি মাহফিলগুলো তদারক করার জন্য প্রশাসনের প্রতি নিদের্শনা জারি করা হয়েছে। এ নিয়ে অনাকাংখিত পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।
আমীরে জামায়াত বলেন, আমরা সব দিক থেকে অধিকার হারা। যে সব যুবকদের বয়স ২৪/২৫ বছর, ভোট কী জিনিস তারা তা দেখতে পারেনি। অথচ তারাই ভবিষ্যতে দেশ গড়ার কারিগর হবেন। তিনি বলেন, পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, একটি শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংক থেকে জালিয়াতের মাধ্যমে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে তুুলে নেয়া হয়েছে। যেটা আদায় হওয়ার সুযোগ নেই। এই কাজটা তারাই করেছে, যারা ডাকাতির ভূমিকায় অবর্তীণ হয়ে ব্যাংকগুলোর হর্তাকর্তা হয়ে বসেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ক্ষমতাসীনদের এক ছাত্রনেতাই নাকি ২০০০ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে দুদক ই বলছে। তাহলে বাকীদের কী অবস্থা? তিনি বলেন, তারা দুর্নীতি, লুটপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। কিন্তু এর দায় দায়িত্ব শুধু পাচারকারীরাই নিবে না। এর দায় ভোগ করতে হবে আজকে যারা শিশু তাদের থেকে শুরু করে দেশের জনগনকে। এখন এলসি খোলার ডলার নেই। এর দায় কার? মূলত: এ দেশকে ব্যর্থ অর্থনীতির রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আদালতে বিচার নেই। চাঁদাবাজীর কারনে মানুষ ব্যবস্থা করতে পারছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের চরিত্র হননের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় দুইটি মহিলা মহাবিদ্যালয়ে এই ধরনের সর্বনাশা কার্যক্রম সরকারী দলের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় হয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশের এই অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বসে থাকতে পারে না। তিনি মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম, শহীদ মওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মরহুম মকবুল আহমেদসহ শহীদ নেতৃবৃন্দের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তাদের রেখে যাওয়া কাজ এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি আগামী দিনে প্রতিটি মুহুর্তেকে কাজে লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ব্যক্তিগত এজেন্ডা নয়, আমাদের বুঝে শুনে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দুনিয়ার কোন মায়া আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। শহীদ নেতৃবৃন্দ তাদের জীবনের রক্ত দিয়ে আমাদের সেটাই দেখিয়ে গেছেন। চলমান আন্দোলনে আমরা আল্লাহর দেয়া গাইড লাইনের বাইরে যাবো না। এই ভিতরে থেকে আল্লাহর উপর ভরসা করে মাঠে নামবো, তাহলেই বিজয় আসবে সুনিশ্চিত। কুরআন সেই বলেছে।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, স্বৈরাচারী হিংস্র শক্তির মোকাবেলায় অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে সাজাতে হবে। আমরা আশা করছি, জুলুমের এই দীর্ঘ পথের অবসান হবে। তাই জনগনের প্রত্যাশা পূরণে, দাবী আদায়ে আমাদের সামনের সারিতে থাকতে হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল তৃণমূলে গণভিত্তি অর্জনে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, মহানগরীর প্রতিটি ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দিতে হবে। প্রতিটি শ্রেনী পেশার মানুষকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসতে হবে। সামাজিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, তিনি উল্লেখ করেন, জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ঘাড়ে চেপে বসা সরকারে হাত থেকে জনগনকে মুক্ত করতে কেন্দ্রীয় নিদের্শনার আলোকে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর আন্দোলনে ঢাকা মহানগরী কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ইসলামী আন্দোলন সবচেয়ে সমৃদ্ধ আন্দোলন। ওহী ভিত্তিক আন্দোলন জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ। এই আন্দোলনে সমৃক্ত সকলকে কুরআনের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। সত্যের সাক্ষ্য হতে হবে। বর্তমান সময়টা এজন্য সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত সময়।