বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৫টি বছর জালেমের অব্যাহত জুলুম নির্যাতনে জনগন অতিষ্ঠ। আজকে শুধু জামায়াতে ইসলামীই নয়, যারাই ইসলামের পক্ষে কথা বলেছে, তারাই জেল জুলুমের শিকার হয়েছে। গোটা দেশটাই একটা বড় কারাগারে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এই দেশকে যদি আমরা মুক্ত করতে চাই, দেশকে উদ্ধার করতে চাই, এই দেশে যদি সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে চাই, কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক একটি কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই, তাহলে সংগ্রামের পথে এগিয়ে আসতে হবে, আন্দোলন সংগ্রাম জীবন দেয়ার পথেই আমাদের মুক্তি। তিনি বলেন, কারবালার ঘটনা থেকে আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার প্রেরণা পেয়ে থাকি। বিপদ মুসিবত যাই থাকুক না কেন, ঐক্যবদ্ধভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে। এই পথে আমাদের পূর্বসূরীরা সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন। এই পথই মুক্তির পথ। এই পথ ছাড়া অস্থিতিশীল পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
আজ সোমবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির, সহকারী সেক্রেটারি ড. আবদুল মান্নান, শ্রমিক নেতা আবদুস সালাম প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর মজলিশে শুরার সদস্য শাহিন আহমদ খান, আশরাফুল আলম ইমন সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এটিএম মাসুম তার বক্তব্যে বলেন, জ্ঞান বিজ্ঞানে মুসলমানরাই শীর্ষে ছিলেন। কিন্তু মুসলমানদের অনেক অর্জনই লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। মুসলমানরা কুরআন বাদ দিয়ে মানুষের তন্ত্র মন্ত্রের পিছনে ছুটেছে। তাগুতি শক্তির গোলামে পরিণত হয়েছে। মুসলমানদের সকল হীনমন্যতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সুন্দর, সুষ্ঠু ও কল্যাণের দিকে ফিরে আসতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে আশুরাকে শুধুমাত্র কারবালার ঘটনার সাথে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এই আশুরার দিনে শুধু কারবালার ঘটনাই নয়, অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। হযরত আদম (আ:) এর আগমন থেকে শুরু করে, হযরত ইবরাহিম (আ:) এর আগুন থেকে মুক্তি, মুসা (আ:) এর ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তসহ অনেক ঘটনা। একদিকে ছিল তাগুতি শক্তি, যারা নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে, অন্যদিকে ছিল নবী ও তার অনুসারীরা। যারা সমাজে আল্লাহর বিধান কায়েমের জন্য কাজ করেছেন। একদিকে হক আরেকদিকে বাতিল, একদিকে ন্যায় অন্যদিকে অন্যায়। এই লড়াই এর পরিণতিতে আল্লাহ তায়ালা ফেরআউনকে পানিতে ডুবিয়ে মারেন অন্যদিকে মুসা (আ:) কে বিজয়ী করেন। তিনি বলেন, মুসা (আ:) কে আল্লাহ ৮টি মুজেজা দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি দাওয়াতী কাজ করতেন। মুজিজা যখন প্রকাশিত হয়, তখন মানুষের সামনে ২টি পথ খোলা থাকে। একটি হলো ঈমান আনা অন্যটি আযাবের জন্য প্রস্তুত হওয়া। এর বাইরে অন্যকোন পথ খোলা থাকে না।
তিনি কারবালার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, হযরত ইমান হোসাইন (রা:) খেলাফত দখলের জন্য যাননি। যুদ্ধও করতে যাননি। তিনি শুধুমাত্র প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন। বিবেকের তাড়নায় জাহেলিয়াতের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য তিনি প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন। তিনি ৩টি শর্ত দিয়েছিলেন। হয় তাকে সীমান্তের বাইরে রেখে আসা, নয়তো ইয়াজিদের কাছে নিয়ে যাওয়া অথবা মদীনায় ফিরে যেতে দেয়া। কিন্তু তাকে কোনটাই সুযোগ দেয়া হয়নি। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন, তার এই কুরবানীর মধ্য দিয়ে তিনি প্রমান করে গেছেন, সামর্থ যাই থাকুক না কেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। এটাই ঈমানের অনিবার্য দাবী। তিনি বলেন, কারবালার ঘটনা থেকে আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার প্রেরণা পেয়ে থাকি। বিপদ মুসিবত যাই থাকুক না কেন, ঐক্যবদ্ধভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে। এই পথে আমাদের পূর্বসূরীরা সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন। এ পথ ধরেই মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলী শাহাদাত বরণ করেছেন। এই পথই মুক্তির পথ, এই পথই সোনালী পথ। এই পথ ছাড়া অস্থিতিশীল পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এর বিপরীত দিকে রয়েছে ইবলিশের পথ, তাগুতী পথ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৫টি বছর জালেমের অব্যাহত জুলুম নির্যাতনে জনগন অতিষ্ঠ। আজকে শুধু জামায়াতে ইসলামীই নয়, যারাই ইসলামের পক্ষে কথা বলেছে, তারাই জেল জুলুমের শিকার হয়েছে। গোটা দেশটাই একটা বড় কারাগারে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এই দেশকে যদি আমরা মুক্ত করতে চাই, দেশকে উদ্ধার করতে চাই, এই দেশে যদি সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে চাই, কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক একটি কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই, তাহলে সংগ্রামের পথে এগিয়ে আসতে হবে, আন্দোলন সংগ্রাম জীবন দেয়ার পথেই আমাদের মুক্তি। আজকের দিনে আমাদেরকে সেই শপথ নিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ১০ই মহররমের ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদের সামনে দুটি জিনিস পরিস্কার করে। একটি হলো সুযোগ পেলেই বিরোধী শক্তি সত্য ও সুন্দরের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে চায়। কিন্তু চরম ধৈর্য্য ও সাহসিকতা নিয়ে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা নিয়ে এগিয়ে গেলে বিজয় আসবেই। আর বিরোধীরাই ইতিহাসের বাকে বাকে হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, জাহেলিয়াতের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ইমাম হোসাইন (রা:) আপোষহীন ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আত্মসমার্পন করেননি, মাথানত করেননি, জীবন দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা আপোষ করেননি। কাপুরুষের মতো নিজের জীবন বাচাঁতে চিন্তাও করেননি। তিনি উল্লেখ করেন, জেল, জুলুম, গুম, খুনের মধ্য দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়া যাবে না।
আবদুস সবুর ফকির বলেন, কারবালায় একটি অসম যুদ্ধ হয়েছে। জুলুমবাজরা জুলুম করবে। কিন্তু সত্যে বিশ্বাসীরা জুলুমের প্রতিবাদ করেই যাবে, সংখ্যা তাদের যতই কম হউক না কেন। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসি, আল্লাহর রাসূলকে ভালোবাসি, তাহলে আশুরা থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে সরকারের দায়িত্ব ছিল আশুরার শিক্ষাকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। অথচ সরকার এই আলোচনা করাতো দূরের কথা, যারা করবে তাদেরকে কারবালার মতো কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, আজকে কারবালার ঘটনাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মুসলিমদের সংকট, মুসলমানদের বিভক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেস্টা হচ্ছে। অথচ তা পৃথিবীর আদি থেকে শুরু হওয়া সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের দ্বন্দ্বেরই ধারাবাহিকতা মাত্র। এই ন্যায়-অন্যায়ের দ্বন্দে আমাদেরকে ন্যায়ের পক্ষে হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর মত আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, রাত যত গভীর হয়, সুবহে সাদেক ততই কাছে আসে। ঈমানদারদের জন্য পরীক্ষার পরই আসে জাতির জন্য নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ। তাই আশুরা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।