সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং কারাবন্দী আলেমদের মুক্তির দাবিতে আজ ৫ জুলাই ২০২২ মঙ্গলবার রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি জননেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে এক প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, হাফিজুর রহমান, নিজামুল হক, আব্দুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী পুর্বের সভাপতি মু. আবুল খায়ের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুল কাইউম মুরাদ সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন থানা আমীর, সেক্রেটারি ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
মিছিল পরবর্তী প্রতিবাদ সমাবেশে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া জানাই, তিনি আমাদেরকে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে জন্ম ও ইসলামের মতো নেয়ামাত দান করেছেন। অথচ ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে দীর্ঘদিন ধরে ইসলাম বিরোধী অপশক্তিগুলো নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলামকে মুছে ফেলার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। বর্তমানে তারা অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে ইসলামী আদর্শের শিক্ষাসমূহ পাঠ্যপুস্তক থেকে সরিয়ে দিয়ে নাস্তিক্যবাদ শেখানোর ষড়যন্ত্র করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে দেশে আলেম-ওলামাদেরকে জেলখানায় আটকে রেখে তাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। বিশ্ববরেণ্য মুফাস্সিরে কোরআন মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বন্দি করে রেখেছেন, মুফতি কাজী ইবরাহীম, আল্লামা মামুনুল হক, মুফতি আমীর হামজা সহ অসংখ্য আলেমকে বন্দি করে রেখেছেন। এদিকে আমরা লক্ষ্য করছি, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার আদালত থেকে পাঁচ বার জামিন পাওয়ার পরেও আপনারা জেলগেটে আবারো আটকিয়ে দিচ্ছেন। মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান একজন বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন তাঁকে জামিন দিচ্ছেন না। আমরা অবিলম্বে ঈদুল আযহার আগেই আলেম-ওলামা সহ এসব সম্মানিত মানুষদেরকে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। মনে করবেন না আলেমদের বন্দি করে , তাদের কন্ঠরোধ করে ইসলামী শিক্ষা ও তমুদ্দুন বিরোধী চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে পারবেন। দিনের পর দিন বরেণ্য আলেমদের কারাগারে বন্দী রেখে এদেশের মুসলমানেরা নিরবে নিভৃতে ঘুমিয়ে থাকতে পারে না। দেশে ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ ধ্বংসের চক্রান্ত প্রতিহত করা হবে। প্রয়োজনে দেশের ২০ কোটি মুসলমানকে সাথে নিয়ে আমরা রাজপথে গণআন্দোলন গড়ে তুলবো।
ড. মাসুদ আরও বলেন, একটি মুসলিম প্রধান দেশে আমরা সেই শিক্ষা ব্যবস্থা চাই, যেখানে রাসূল সা. এর আদর্শ শিখে মানুষ নৈতিকতা, মানবিকতা, জবাবদিহীতা ও বাস্তব সম্মত শ্রিষ্টাচার, ভদ্রতায় পরিপূর্ণ হবে। আমরা হযরত ওমর রা. এর শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করার কথা বলি। আজ সিলেট সুনামগঞ্জ সহ সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে অথচ দায়িত্বশীল কেউ তাদের পাশে নেই। হেলিকপ্টারে চড়ে প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শন করতে যান অথচ আমরা যদি ওমরের শিক্ষায় জাতিকে শিক্ষিত করতে পারতাম তাহলে কষ্টে থাকা সেসব মানুষ আজ উপকৃত হতো। মানুষকে সহযোগিতার জন্য আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের মতো কাঁধে বোঝা নিয়ে যেতেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে মূল্যবোধহীনতা, অপরাধ প্রবণতা ও নানাবিধ সামাজিক অনৈতিকতাবোধ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। নাস্তিক্যবাদী নৈতিকতাহীন শিক্ষা ব্যবস্থায় আজ ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে একজন ছাত্র শিক্ষককে হত্যা করছে, শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুন নেসা নুন স্কুলে পড়া একজন ঐশী তার জন্মদাতা বাবা-মাকে হত্যা করছে। জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে উৎসব পালন করছে। এ পরিস্থিতিতে নাগরিকদের নৈতিকভাবে বলীয়ান করে, অপরাধমুক্ত জীবন গড়ার লক্ষ্যে ধর্মীয় ও ইসলামী শিক্ষার পরিধি বাড়ানো জরুরি। তা না করে ধর্মীয় শিক্ষা সঙ্কুচিত করা অযৌক্তিক, অপরিণামদর্শী, জাতি বিধ্বংসী ও চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। এ দেশের জনগণ ইসলামী আকিদা, মৌলিক বিশ্বাস ও চিন্তাচেতনা বিরোধী কোনো শিক্ষানীতি মেনে নিবেনা।