বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, বর্তমান সরকার সবচেয়ে বড় আঘাত হেনেছে ইসলামের উপর। মদের লাইসেন্স দিয়েছে। নাচগান ছড়িয়ে দিয়ে ডিইসলামাইজেশনের ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতিবাজ দরকার, দালাল সরকার, অবৈধ সরকার। এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পুুর্নগঠন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য সাহসিকতার সাথে রাজপথে নামার প্রস্তুতি গ্রহন করে একদফা আন্দোলনে অগ্রনী ভূূমিকা পালনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আজ শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত সহযোগী সদস্য সম্মেলন ২০২২ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সবুর ফকির, মোকাররম হোসেন, ফরিদ হোসাইন প্রমুখ। সম্মেলনে উপস্থিত সহযোগীদের মাঝে ১৪ হাজার রিপোর্ট বই পৌছে দেয়া হয়। স্থানীয় মিলনায়তন থেকে সম্মেলনটি পরিচালিত হয়। এ সময় বিভিন্ন স্পটে অনলাইনের মাধ্যমে সহযোগীবৃন্দ সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের তাকওয়াবান হতে বলেছেন। রমযান মাস আসছে, আরো বেশী তাকওয়াবান হওয়ার চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, মানব জাতির ইতিহাস দুটি ধারা। সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, শাসক-শোষিত। আমরা ইতিবাচক ধারার সাথে আছি। ন্যায়ের সাথে আছি। আমরা নবী রাসূলদের উত্তরসূরী। আবু বকর, ওমর, উসমান আলীর উত্তরসূরি। যারা যুগ যুগে জীবন বিলিয়ে দিয়ে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীর বাকে বাকে আজকে মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার, তারা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছেন সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি আরো বলেন, আমাদের মূল পরিচয় মু’মিন, মুসলমান। কুরআনের আয়াতের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, যারা সৎ কাজের আদেশ দেয়, অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার কথা বলে তারাই সফলকাম। জামায়াত সেই দলের নাম। আমরা সফলকাম আলহামদুদিল্লাহ। মুমিনদের ভয়ের কোন কারন নেই।
তিনি বলেন, রাসূল যেমনি দাওয়াত আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছিলেন, আমাদেরও মানুষের কাছে দাওয়াত পৌছে দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটা নবীআনা দায়িত্ব, এটা ফরজিয়াত। আমাদের পরিপূর্ন মোমিন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামীর মতো আন্দোলন না থাকলে আল্লাহর পথে দানের ফরজিয়াত কী ভাবে পালন করতাম। পৃথিবীর অনেক দেশে মানুষ এ ধরনের আন্দোলন সন্ধান করেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই আন্দোলন একটা রহমত। তিনি বলেন, নিজেদের বিপ্লবী চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। ইসলামের সঠিক ধারনা ও ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। উত্তম জিহাদ হচ্ছে জালেম শাসকের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলা। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ঈমানী দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব পালনে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সহযোগী সদস্যরা সংগঠনের গঠনতন্ত্র স্বীকৃত পদবী। শিথিলতার জায়গা থেকে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। দ্বীনের বিজয়ী করার আন্দোলনে সহযোগী। তিনি কুরআনের আয়াত তুলে ধরে বলেন, আমাদের সৃস্টি করা হয়েছে দুনিয়ার জীবন উপভোগ করার জন্য নয়। খিলাফতের জিম্মাদার হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। সৃষ্টির উদ্দেশ্য বুঝতে ব্যর্থ হলে দুনিয়ার জীবনই ব্যর্থ। তিনি কুরআনের আয়াত তুলে ধরে বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দ্বীন প্রতিষ্ঠায়, নির্যাতনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে না। ইবাদত ও খেলাফতের সমন্বিত রূপই হচ্ছে দ্বীন। দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজকে আল্লাহ ফরজ করেছেন। এজন্য আমাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সব কিছু উপেক্ষা করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াত কর্মীই সমাজ কর্মী। সামাজিক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে। মানুষের বিপদে আপদে এগিয়ে আসতে হবে। বৈশ্বিক পরিবর্তন বার্তা দিচ্ছে, বিশ্ব নেতৃত্ব দিবে মুসলিম বিশ্ব। দেশেও সংকট চলছে। তারও একদিন অবসান হবে, ইনশাআল্লাহ।
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ইসলামী আন্দোলন সবচেয়ে বড় নেয়ামত। আল্লাহর দ্বীনকে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিরোধ, জুলুম নিযার্তন হবে। আল্লাহর ঘোষনা অনুযায়ী সবকিছু পদানত করে ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নবী রাসুলগনের সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি কুরআনের আয়াত তুলে ধরে বলেন, সবাইকে পরীক্ষা করা হবে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের যে কোন জুলুম নির্যাতনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আল্লাহর দেয়া শর্ত পূরণ করতে পারলেই কেবল আল্লাহ তায়ালা নেতৃত্ব দিবেন। এ ঘোষণার পর কোন মুসলিম বসে থাকতে পারে না। তিনি দেশে বিদেশে ইসলামী আন্দোলন ও এর নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ইসলামী আন্দোলন করার কারনে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন হয়েছে। তারা হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছেন। বিনা অপরাধে ফাসির কাষ্ঠে ঝুলেছেন। তারা কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি, আপোষ প্রস্তাবে কর্ণপাত করেননি। আমরা সেই আন্দোলনের উত্তরসুরি। তাই আগামী দিনে দ্বীনকে বিজয়ী করতে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী ও বিজয়ী আন্দোলনে পরিণত করতে হলে গণমুখি হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য শক্তিশালী ও মজবুত সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। জনগনের মাঝে সংগঠনের কাজ ছড়িয়ে দেয়া। সততা ও যোগ্যতার দিক দিয়ে নিজেদেরকে যোগ্যরূপে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, মহানগরীর প্রতিটি স্থানে ইসলামী আদর্শকে পৌছে দিতে হবে। কোন একজন মানুষও ইসলামের দাওয়াতের বাইরে না থাকে। মহানগরী দক্ষিণকে ইসলামী আন্দোলনের রাজধানীতে পরিণত করতে হবে। তিনি বলেন, জীবনের পরিবর্তনের জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে। জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করতে নিজেদের পরিশুদ্ধ করতে হবে। মানুষের কাছে ইসলামের সুমহান আদর্শ তুলে ধরে ঈমানী দায়িত্ব পালন করতে হবে।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে খুশি করা। আমরা যদি তা করতে পারি, তাহলেই সম্মেলন সফল হবে। স্ব স্ব জায়গা থেকে এই আন্দোলনকে গতিশীল করতে ভূমিকা পালন করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আক্বিমুদ্বীনের জন্য আমরা কাজ করছি। যে নামাজ পড়ে মুসুল্লি হয়েছি, সেই নামাজের দাবীই হচ্ছে আকিমুদ্বীন। তাই দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেদের দূরে রাখা যাবে না। সহযোগি থেকে কর্মী হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ভুমিকা পালন করতে হবে।