১৪ই ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী’ দিবসের আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার প্রকৃত নায়কদের চিহ্নিত করার জন্য নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। ক্ষমতাসীনরা মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে বিরোধী মত ও দলকে দমনের অপকৌশল হিসেবে প্রয়োগ করেছে যা সমগ্র জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। ক্ষমতাসীনরা প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মত মিথ্যা নাটক সাঁজিয়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। ১৯৭১ সালে যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেই সব শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং মহান আল্লাহর কাছে তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত সেসব পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। বিজয়ের ৫০ বছর অতিক্রম হতে চললেও স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা আজও ভূ-লুন্ঠিত। তাই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে সমুন্নত রাখতে এবং শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আজ ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ১৪ ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী’ দিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি এডভোকেট ড. মোঃ হেলাল উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহা. দেলাওয়ার হোসাইন ও মুহা. আবদুল জব্বার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য কামাল হোসাইন, শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য মীর আমিরুল ইসলাম বাহার সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বিজয়ের ঠিক একদিন আগেই জাতির বিবেক শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে। বিজয়ের পর নবগঠিত বাংলাদেশকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্যই এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আবারো জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে। বাস্তবিক অর্থেই দেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। জনগণের ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি-দুঃশাসন গোটা জাতিকে গ্রাস করেছে। মানুষের জান-মাল ও ইজ্জতের কোন নিরাপত্তা নেই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে আজ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশের জাগ্রত ও মেধাবী সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে কুচক্রী মহল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। তা আজ জাতির সামনে দিবালোকের মত স্পষ্ট। দেশের প্রকৃত শত্রু সেই ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী আজও নানা চক্রান্ত অব্যহত রেখেছে। স্বাধীনতার মূল অর্জন গণতন্ত্রকে হারিয়ে দেশ আজ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করেছে। বিরোধী মতের লোকজনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরাধীনতার শিকল থেকে জাতিকে মুক্ত করে সুষ্ঠধারায় রাজনৈতিক চর্চা করতে হবে। তাহলেই কেবল স্বাধীনতার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জিত হবে। তিনি সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ ও কর্ম প্রচেষ্টাকে সম্মানের সাথে স্মরণ করেন এবং তাদের চিন্তা চেতনাকে আরও অর্থবহ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা এবং দেশ গড়ার প্রয়োজনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করার আহবান জানান।