জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, এদেশের জনগণ দেশের নাগরিক হয়েও আজ ভিন্ন দেশীর মত ধূকে ধূকে দিন পার করছে। দেশে তেল গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে সম্পূর্ণ সরকারের নিজ ইচ্ছায়। আবার এর ফলে সৃষ্ট পরিবহণ বাসে যাত্রীদের যাতায়াতে চরম দূর্বিষহ অবস্থারও সৃষ্টি করা হয়েছে। বাস পরিবহণ সেক্টরে যারা আন্দোলন করছে তারাও এই সরকারের মদদপুষ্ট লোকজন। সরকার একদিকে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করছে অন্যদিকে মানুষের জীবন যাপনে এর প্রভাব কি তা বিবেচনায় নিচ্ছেন না। মানুষের প্রয়োজনীয় চাল, ডাল সহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির দিকেও মনোযোগ দিচ্ছেন না। সাধারণ মানুষের জন্য এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে আজ আইনের শাসন ভূলন্ঠিত, গণতন্ত্র নির্বাসিত ও মানবাধিকার বিপন্ন। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকে ভূমিকা রেখে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাতে হবে। নিজেদেরকে সর্বপ্রথম ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের সামনে আসতে হবে।
আজ ৭ নভেম্বর ২০২১ রাজধানী ঢাকার একটি মিলনায়তনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি মুহা. আব্দুল জব্বার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিলো দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় শপথ নিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জনগণ নিরুপায় হয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে একটি বিপ্লব সংগঠিত করেছিল। আজও দেশে জনগণকে নিয়ে তামাসা চলছে, খেলাধূলা চলছে। এটা যেন বানরের পিঠা ভাগাভাগিকে স্মরণ করে দেয়। জনগণ বধির নয়, বিবেকহীন নয় তারাও সরকারের সকল চালাকি বোঝে। আজকে রাজনৈতিক জুলুম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা গুম করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জনগণকে স্তব্ধ করে রাখার জন্য সকল নীল নকশা সাঁজিয়ে রাখা হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক কোন কর্মসূচি পালনের অধিকার কারো নেই। শ^াসরূদ্ধকর এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ দেশের মানুষ অতিবাহিত করছে। বাংলাদেশের অতন্দ্র প্রহরী ৫৭জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে সরকার শুরুতেই দেশ ধ্বংসের পরিকল্পনার সূচনা করেছিল। আজ সেটা জাতির সামনে স্পষ্ট হয়েছে। এদেশের সীমান্তের পাহারাদার বিডিআর বাহিনী ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ফলে দেশের ভৌগলিক নিরাপত্তা আজ নাজুক একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সঙ্কটময় অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই। ৭ নভেম্বরের চেতনা মূলত আধিপত্যবাদী ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে এক ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের চেতনা। তাই বিপ্লব দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও জুলুমতন্ত্র মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে দেশের প্রতিটি নাগরীকগণকে নিজ নিজ অবস্থান হতে সচেতন থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা ও প্রিয় বাংলাদেশ ৭২ থেকে ৭৫ সালের দিকে বিপথে চলে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনই দেশপ্রেমিক সিপাহী-জনতা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষের মনে যে ক্ষোভ দানা বেঁধে ছিলো তারই বহিঃপ্রকাশ ০৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি। আজও দেশে মেগা প্রজেক্ট নামে মূলত দুর্ণীতির প্রতিযোগিতা চলছে। তৎকালীন সময়েও দুর্ণীতি আকাশ ছোঁয়া ছিলো, বর্তমানেও বাংলাদেশে তেমনটি চলছে। একটি পদ্মা সেতুর বাজেট দিয়েই আর ৪টি সেতু করা যেতে পারতো। প্রকৃত অর্থে এই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকেও আজ মানুষ মুক্তি চাচ্ছে। মাছের মাথায় যদি পঁচন ধরে অটোমেটিক এর প্রভাব মাছের লেজেও পড়ে। অর্থাৎ দেশের সর্বোচ্চ চেয়ারে বসা ব্যক্তিটি যখন অনৈতিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করেন তখন সবখানেই এর ছাপ পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, মহান আল্লাহ পৃথিবীর কোন পরিবর্তন করতে চাইলে একটি জাতির উপরে অন্য আরো একটি জাতিকে সমাসীন করে দেন। তিনি বলেন, বিপ্লবের মূলত ২টি ধারা আছে সংহতি ও ঐক্য। মহান আল্লাহ দেখতে চান একটি সীসা ঢালা প্রাচীরের মত কারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে সংগ্রাম করছে। আল্লাহ তাদের হাতেই বিজয় দান করেন। আল্লাহ প্রাচীর নির্মাণ করতে বলেছেন। আজকের বাংলাদেশের দিকে তাঁকালে বোঝা যায় ক্ষমতাসীনদের পরিকল্পনা ছিলো দেশের মানুষের মধ্যে একটি বিভাজন পরিস্থিতি তৈরী করা। সেখানে তাদের মূল হাতিয়ার ছিলো মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া। প্রকৃত মুসলিম ও দেশকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র। আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ হতে দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ত্ব রক্ষার স্বার্থে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন করতে চাই।