বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় একটি দিন। ২০০৯ সালে এই দিনে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই এই ঘটনা সংগঠিত হয়। এই ঘটনায় দেশ ও জাতির যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়। ইতিহাসের এই কলঙ্কজনক অধ্যায় দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে দীর্ঘমেয়াদে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। একদিকে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী সেনাবাহিনীকে দূর্বল করে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছে। অপরদিকে এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে এদেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ধ্বংস করে দিয়ে আমাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সীমানাকে অরক্ষিত করে দেয়ার নীল নকশা আঁকা হয়েছে।
আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে পিলখানা ট্রাজেডির শহীদদের স্মরণে আয়োজিত ‘আলোচনা সভা ও দোয়া’ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও যুব নেতা কামাল হোসাইন, আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, আ.জ.ম রুহুল কুদ্দুস, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য সিরাজুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার সুমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জাতির ক্রান্তিকালীন সময়ে দেশপ্রেমিক শক্তি ও সেনাবাহিনীকে দূর্বল করতেই নীলনকশার অংশ হিসাবে পিলখানা ট্রাজেডি ঘটেছে। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে সংগঠিত এই ঘটনার পূর্বাপর কিছু ঘটনা জনগণের সামনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ফলে সেদিনের ঘটনা ও পরবর্তী তদন্ত কার্যক্রম দেখে দেশবাসী বুঝতে সক্ষম হয়েছে এই ঘটনার নেপথ্য শক্তি কারা। সেদিনের এই ট্রাজেডির মাধ্যমে বাংলাদেশের গনতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। বিডিআরের অতীত গৌরবকে ভুলুন্ঠিত করে নতজানু এক বাহিনী গঠন করা হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে হত্যা ও বিরাজনীতিকরন করে মুলত দেশকে করদ রাজ্যে পরিনত করার পেক্ষাপট তৈরির জন্যই পিলখানার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। সেইসাথে দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব ও সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য জাতির ঘাড়ে চেপে বসা এই ফ্যাসিষ্ট সরকারের হাত থেকে দেশবাসীর মুক্তির জন্য আরেকটি দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, পিলখানার নির্মম হত্যাযজ্ঞ কোনো তাৎক্ষণিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার জন্য এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল। আজ তাবেদারদের হাত হতে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ভুখন্ড ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সকলকে দেশপ্রেম ও ইসলামের সুমহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভুমিকা পালন করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি দেশ স্বাধীন করতে শহীদ হয়েছেন ৫৫ জন সেনা অফিসার আর শুধুমাত্র পিলখানার ঘটনায় ২ দিনে ৫৭ জন সেনা অফিসার নিহত হয়। সেদিন শুধুমাত্র সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদেরকেই হত্যা করা হয়নি বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকেই হত্যা করা হয়েছে। তবে ইতিহাস সাক্ষী কোন ব্যাক্তিকে হত্যা ও প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে কোন জাতিকে নিঃশেষ করা যায়না। তিনি এই ঘটনার পুনঃ তদন্ত ও ষড়যন্ত্রের প্রকৃত কুশীলবদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে নিহত বীর সেনাদের রুহের মাগফেরাত ও তাদের শাহাদাতের মর্যাদা কামনা করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।