বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ওু ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, আজ মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের এই দিনে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সেই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যারা এদেশের মানুষের মুক্তি, গণতন্ত্র এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহন করে শাহাদাতবরণ করেছেন, যুদ্ধাহত হয়ে এখনো নিজের শরীরে সেই ত্যাগের চিন্হ বহন করে চলেছেন এবং নাম না জানা অসংখ্য মানুষ যারা দেশের জন্য ভুমিকা পালন করেছেন। আজকে স্বাধীনতার ৪৯তম বছরে এসে যদি আমরা পর্যালোচনা করি বাংলাদেশে কোথায় এসে পৌঁছেছে? তাহলে আমরা দেখতে পাই এখনও বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করেনি। বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কোন প্রচেষ্টা চালায়নি বরং তারা রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতি করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নজিরবিহীন কলঙ্কজনক ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। নির্বাচন কমিশণকে সরকারের আজ্ঞাবহ পুতুলে পরিণত করেছে। আজ জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার নেই, রাজপথে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার নেই, লেখনির অধিকার নেই, আজকের বাংলাদেশ গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’র ঠিক বিপরীত দিকে পরিচালিত হচ্ছে। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের কোপানলে পড়ে আজকের বাংলাদেশ ক্ষতবিক্ষত ও বিপর্যস্ত। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যদি দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি তাহলেই শুধুমাত্র এই অপশক্তির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহঃ সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মন্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য কামাল হোসাইন, এডভোকেট এস.এম. কামাল উদ্দিন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুল জাব্বার, আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আমিনুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম,আশরাফুল আলম ইমন, শাহীন আহমদ খান প্রমূখ।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, বাংলাদেশ যেন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে তার জন্য আধিপত্যবাদী শক্তি একের পর এক নগ্ন ছোবল দিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফলে রাষ্ট্র আজ পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ। ক্ষমতাসীনদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতায় বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তে সরকার বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশে আইনের শাসন বলে কিছু নেই। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই, মানবাধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। বাংলাদেশকে রাজনীতি শূন্য করা হয়েছে। দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে প্রহসনের মাধ্যমে হত্যা ও গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। পিলখানা ট্রাজেডির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী বিডিআরকে দুর্বল করে বাংলাদেশের সীমান্ত অরক্ষিত করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, আজকে লুটপাটের মহোৎসবে ব্যাংক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত। আধিপত্যবাদী শক্তির হাত থেকে দেশের সীমানা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য আজ সকল রাজনৈতিক শক্তি ও জনগণকে দেশপ্রেম ও ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাই আসুন আমরা শপথ বদ্ধ হই প্রয়োজনে এদেশের জন্য আমরা জীবন দিবো তবুও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও এদেশের এক ইঞ্চি মাটিও কোন আধিপত্যবাদী শক্তিকে বর্গা দেবনা ইনশাআল্লাহ।
মন্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, বিজয়ের ৫ দশকেও জনগণ স্বাধীনতার সুফল হতে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের বিভেদের রাজনীতির কারণে আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে এখনও পৌঁছুতে পারিনি। বিভক্ত জাতিকে নিয়ে কখনো একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে সকলকে প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ ও বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।
এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল বাক-স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের মুক্তি, অর্থনৈতিক মুক্তি অথচ এখনো আমাদের বাক-স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রাচীনতম সংবাদপত্র দৈনিক সংগ্রাম অফিসে হামলা ও প্রাবীণ সম্পাদক আবুল আসাদকে যেভাবে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়েছে তার মাধ্যমে আবারও ক্ষমতাসীনদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
অনুষ্ঠানে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাগফিরাত কামনা করে এবং বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সুখ, সমৃদ্ধি ও জনগণের নিরাপত্তা কামনা করে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে বিশেষ দোআ ও মোনাজাত করা হয়।
এছাড়াও আজ গেন্ডারিয়া থানা, শ্যামপুর থানা, খিলগাঁও পূর্ব থানা, ডেমরা উত্তর থানা, পল্টন থানা, লালবাগ থানা, বংশাল থানা, সবুজবাগ উত্তর থানা, সবুজবাগ দক্ষিণ থানা, কদমতলী পূর্ব থানা, খিলগাঁও পশ্চিম থানা, যাত্রাবাড়ি পূর্ব থানা, ধানমন্ডি থানা, নিউমার্কেট থানা, রমনা থানা, ডেমরা দক্ষিণ থানা সহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় জামায়াতের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, দোয়া অনুষ্ঠান, ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং, মেডিকেল ক্যাম্প, দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়।