বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর একটি বেদনাময় দিন, বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে আমরা দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক, ডাক্তার, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ও বিজ্ঞানীসহ আমাদের গর্বিত সন্তানদের হারিয়েছি। বাংলাদেশকে মেধা-মননে পঙ্গু করার হীন উদ্দেশ্যেই চূড়ান্ত বিজয়ের ঊষালগ্নে যড়যন্ত্রকারীরা পরিকল্পিতভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে, যা আমাদের জাতিসত্তার মর্মমূলে চরম আঘাত করেছিল। তারা মনে করেছিল, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে পারলেই সদ্য স্বাধীন দেশ হিসাবে বাংলাদেশ মেধার উৎকর্ষহীনতায় নেতৃত্বহীন হয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু তাদের সে লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে। আমরা গভীর উদ্বেগ এর সাথে লক্ষ করছি যে, এই নির্মম হত্যাকান্ডের ৪৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও বিষয়টি রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে। অথচ দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বুদ্ধিজীবী হত্যা রহস্য উন্মোচিত হওয়া উচিৎ। তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহবান জানান।
এসময় ড.মাসুদ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যথাযথ মর্যাদায় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং শহীদদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আজ শুক্রবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোআ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকিরের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, মহানগরীর শুরা সদস্য রুহুল কুদ্দুস, এমদাদুল হক, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
ড. মাসুদ বলেন, স্বাধীনতার পরেও দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীরা নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক জহির রায়হারের অন্তর্ধান এখনও রহস্যাবৃত। ধারণা করা হয় তার কাছে সংরক্ষিত মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ, ডকুমেন্টারী ও প্রামাণ্য চিত্র থাকার কারণেই তাকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত জাতির কাছে প্রকাশ পেলে যাদের মুখোশ উন্মোচিত হত মূলত তারাই এসব হত্যাকান্ড ও অপকর্মের সাথে জড়িত। অথচ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে অপরাজনীতি করছে। স্বাধীনতার পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলেও এই নৃশংস হত্যাকান্ডের জন্য দায়ীদের সনাক্ত করতে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বরং তারা এই ইস্যুকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের হাতিয়ার বানিয়ে এবং জামায়াতের গণমুখী রাজনীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধে ভীত হয়ে সম্পুর্ণ মিথ্যা অভিযোগে প্রহসনের মাধ্যমে আমীরে জামায়াত সহ ৫জন শীর্ষস্থানীয় জামায়াত নেতৃবৃন্দকে নির্মম ও নিষ্ঠুরতার সাথে রাজনৈতিকভাবে হত্যা করেছে। তাই গণতন্ত্রের পূণরোদ্ধার, রাজনৈতিক হত্যাকান্ড বন্ধ, জাতিকে অপশাসন ও দুঃশাসন থেকে মুক্ত করতে হলে আওয়ামী অপশক্তি, ফ্যাসিবাদী, বাকশালী ও স্বৈরাচারী সরকারের পতনের কোন বিকল্প নেই।
ড. মাসুদ আরও বলেন, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী বিভেদ, অনৈক্য এবং ‘সংকীর্ণ’ আচরণের মধ্য দিয়ে জাতীয় অগ্রগতির পথে ‘প্রতিবন্ধকতা’ সৃষ্টি করছে। সরকার দেশ পরিচালনায় সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে সমান তালে। তারা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ এবং দেশকে একটি সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও ইনসাফপুর্ণ শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তিনি আসন্ন একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে অবৈধ ও জুলুমবাজ আওয়ামী ফ্যাসীবাদের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার কায়েমের জন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।