ভূমিকা:
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। কৃষি, শিল্প, পর্যটন, জন ও প্রাকৃতিক সম্পদের অমিত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃতিগতভাবে মেধাবী, সৎ ও পরিশ্রমী। বিপুল সম্ভাবনাময় এ দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে এবং সুস্থ ও শান্তির সমাজ গড়তে প্রয়োজন সৎ, দেশপ্রেমিক ও দক্ষ নেতৃত্বের। এ উপলব্ধি থেকেই একটি আধুনিক ও উন্নত জীবন মানসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরি ও যোগ্য নেতৃত্ব উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের জনপ্রিয় ইসলামী সংগঠন এবং অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য প্রতিটি মানুষেরই উচিৎ মহান আল্লাহকে একমাত্র প্রভূ ও নবী মুহাম্মাদকে (সা)-কে আদর্শ নেতা হিসেবে মেনে নেয়া। জামায়াত এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের গণমানুষের কাছে উপরোক্ত আহ্বান পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনে করে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মানুষের সমাজই একমাত্র বিশ্বমানবতার জন্যে শান্তি ও কল্যাণ আনতে সক্ষম। এমন সমাজ গঠন ও রক্ষায় সাহায্য করার জন্যে প্রয়োজন এর উপযুক্ত সরকারের। তাই একটি দায়িত্বশীল ও ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন সরকার গঠনের জন্য জামায়াত বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশ ও দেশের বাহিরে কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না। বরং সকল মত ও পথের অনুসারীদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে গণতান্ত্রিক পন্থায় জনগণের সমর্থন নিয়ে একটি কল্যাণকর, সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়। এ লক্ষ্যে স্বাধীনতাত্তোর সকল জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করে ক্রমাগত সাফল্য অর্জন করে চলেছে।
আশির দশকে জামায়াতে ইসলামীর উপস্থাপিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফর্মুলা দেশে-বিদেশে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৯১ সালে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করার আন্দোলন শুরু হলে তৎকালীন সরকার এ ফর্মুলা মেনে নিয়ে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে তা অন্তর্ভুক্ত করে। যার অধীনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০০১ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৭টি আসনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সাথে জোটবদ্ধভাবে সরকারে অংশ গ্রহণ করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ অত্যন্ত সততা, দক্ষতা, সাফল্য ও সুনামের সাথে জোট সরকারের কৃষি, শিল্প ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যা ইতিহাসে অবিস্বরনীয় হয়ে থাকবে।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ যে বিরল আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। কিন্তু যে স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে লাখো মানুষ অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন নেতৃত্বের কারণে তা আজও অধরা রয়ে গেছে। স্বাধীনতাত্তোর দেশের মেহনতী মানুষ বারবার বঞ্চনা ও শোষণের শিকার হয়েছে। ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে জনগণকে। গণতন্ত্রের জন্য অসংখ্য মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো হচ্ছে। সুশাসন ও মানবাধিকার এখন নির্বাসনে। যে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সেবায় নিয়োজিত থাকার কথা ছিল, সে রাষ্ট্র-ই আজ উল্টো নাগরিক-নিপীড়নযন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যৎকে পাল্টে দিয়ে একটি সোনালী ভোরকে ছিনিয়ে আনতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হাজারো জুলুম নির্যাতন, শাহাদাতের পথ পাড়ি দিয়ে এদেশের সবুজ ভূখন্ডে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে বাংলাদেশের মানুষের বুকের উপর চেপে বসা নীতিভ্রষ্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিন ফুরিয়ে এসেছে। জনগণের আকাক্সক্ষা ও চাহিদার পথ ধরে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আবির্ভূত হবে ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমদের সহায় হোন, আমীন।