জননেতা মীর কাসেম আলী মিন্টু ক্ষণজন্মা একজন প্রতিভাবান উজ্জল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত। যিনি এদেশের ছাত্র জনতার প্রিয় কাফেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রিয় সভাপতি, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, সংগঠক, শিল্প উদ্যোক্তা, সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা, জনকল্যাণ ও সমাজকল্যাণ মূলক অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের আবিষ্কারক হিসেবেই সকলের নিকট পরিচিত ও সমাদৃত।
জনাব মীর কাসেম আলী প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে মেধা, যোগ্যতা দিয়ে সাধ্যমতো সাজানোর কারিগর হিসেবে ও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদই নন, দেশে-বিদেশে তিনি একজন উদ্যোক্তা, সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সুপরিচিত। বিশেষ করে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি একটি সপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু একজন দেশপ্রেমিক ও উন্নয়ন বান্ধব লোক যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন, তবে তা ইতিহাসের এক অপদৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এদশের মানুষ ড. মাহাথিরের উন্নয়ন মডেলে অবিভূত হয়ে বাংলার মাহাথিরকে খুজছে! আর আওয়ামীলীগ মীর কাসেমের মত বাংলার মাহাথিরদের হত্যার আয়োজন করছে!
জনাব মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আনা এ সবই কাগুজে অভিযোগ। যিনি মানবতার সেবায় যে জীবন নিয়োজিত করেছেন আর তাঁকে হত্যা করা হচ্ছে মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য!! কি সেলুকাস এ পৃথিবী! কি অদ্ভুত আর বিষ্ময়কর আমাদের রাজনীতি! কত নিষ্ঠুর, নোংরা, কুলষিত, ক্ষমতার মোহে দিকভ্রান্ত আওয়ামীলীগের এই নেতিবাচক শিষ্টাচার বহির্ভূত অপরাজনীতি! ধিক আজকের সমাজের এই ঘৃনিত বিষবাস্পকে। ধিক্ আওয়ামীলীগের এই অমানবিক, ফ্যাসিস্ট চরিত্রকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে ইতিহাসের চাকা বার-বার ঘুরে আসে। সুতরাং এক মাঘে শীত যায় না, আর আওয়ামীলীগের ক্ষমতাও চিরস্থায়ী নয়।
অসংখ্য গুণের অধিকারী এই ক্ষণজন্মা ব্যক্তি ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার, হরিরামপুর থানার, সূতালরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৃত মীর তৈয়ব আলী ও মাতা মৃত রাবেয়া আখতার (ডলি বেগম)। পারিবারিকভাবে আদর করে তাঁকে পেয়ারু নামে ডাকতেন। ৪ ভাই ১ বোন। জনাব মিন্টু ১৯৭৯ সালে খন্দকার আয়েশা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ২ ছেলে, ৩ মেয়ে। প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত। জনাব মীর কাসেম আলীর বাবা সরকারী চাকুরী করতেন বিধায় বরিশাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার হাতে খড়ি তাঁর। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেজুয়েশান লাভ করেন।
মানবতার কল্যাণে জীবন ব্যায়িত মীর কাসেম আলী ছাত্রদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ছিলেন প্রথম কাতারে। ১৯৬৬ সালে যোগদান করেন মেধাবীদের প্রিয় সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘে। ১৯৭১ সালের নভেম্বরে প্রাদেশিক জেনারেল সেক্রেটারি, ১৯৭৭ সালের শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। এরপর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা, কর্মপরিষদ ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জনাব মীর কাসেম আলী আল-কুরআনের একজন নিবেদিত খাদেম। বাংলাদেশে ব্যাংকিং জগতের আলোড়ন সৃষ্টিকারী, ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের অন্যতম। শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলন করার অপরাধেই তাঁকে হত্যা করতে যাচ্ছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “ওই ঈমানদারদের সাথে তাদের শত্রুতার এ ছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে তারা সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল।” (৮৫:৮)
কর্মজীবনে জনাব মীর কাসেম আলী ১৯৭৮ সালে আর্ন্তজাতিক সংস্থা রাবেতা আলম আল ইসলামীর কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে যোগদান করেন। তিনি মুসলিম, হিন্দু, খৃষ্টান ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থাপনে ভূমিকা পালন ও দেশে বিদেশে মানবিক উন্নয়নে কাজ করেছেন। ইসলামী আন্দোলনের এই সিপাহসালার দ্বীনের দাওয়াত ও জনসেবার কাজে পৃথিবীর সমস্ত ইসলামী দেশ, এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ভ্রমন করেন।
আধুনিক বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লবের ব্যাতিক্রমী এক স্বপ্নদ্রষ্টা। এই রিয়েলাইজেশন সম্পূর্ণ ঠিক নাও হতে পারে। তবে বাংলাদেশে যারা ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে তাদেরকে শুধুমাত্র রাজনীতি, ওয়াজ মাহফিলের ভিতর সীমাবদ্ধ না রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য, সমাজসেবা, শিক্ষা, মিডিয়া, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ইত্যাদির ভিতর নিয়ে এসে সবকিছুকে ইসলামের আলোকে সাজানোর এক প্রবল বাসনা আছে মীর কাসেম আলী ও তার সমমনাদের। সফলও হয়েছেন। যা বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির ক্ষেত্রে নূতন এক ডাইমেনশান সৃষ্টি করেছে। একবার পড়েছিলাম, তুরস্কের নাজিমুদ্দীন আরবাকান সব সময় বলতেন, “Turkey is in her way back to Islam” তিনি কাজ শুরু করেছিলেন একটা কফি হাউস দিয়ে। সেটা ছিল এক নতুন কৌশল, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। ইস্তাম্বুলে ঐ ক্যাফেটা এখনও আধুনিক তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের সুতিকাগার হিসেবে পরিচিত। তাকে একবার তার বন্ধু প্রশ্ন করেছিলেন- নাজিমুদ্দীন, একটা ফুল দিয়ে আপনি কিভাবে বসন্ত আনবেন? তিনি বলেছিলেন- বসীর, বসন্ত শুরু হয় দুই একটা ফুল ফোটার মধ্য দিয়ে। দেখবেন, তূর্কীতে আবার ইসলামি হুকুমাত আসবেই আসবে। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, “যদি এখনই চাও ইসলামি হুকুমাত কায়েম করতে তাহলে আমরা ব্যর্থ হব। কারণ তখন আমাদের শত্রুরা ভেতর ও বাইরের সব দিক থেকে আঘাত হানবে। আসুন আমরা প্রথমে নিজেদেরকে ইসলামের খাটি অনুসারী করে তুলি, আর দুই একটা করে ইসলামের সৌন্দর্য সমাজে ফুটিয়ে তুলি। আসুন আমরা মানুষকে বুঝাই ইসলামি জীবন বিধানের প্রায়োগিক দিক গুলো। ব্যবসা করে শিখাই ‘ইহাই ইসলামী ব্যবসা নীতি” দেখা গেল আধুনিক তুরস্কের ব্যবসা বাণিজ্য তার লোকদের হাতেই এসে গেল। তিনি বলেছিলেন, ‘স্কুল-মাদ্রাসা বানিয়ে আসুন সবাইকে দেখিয়ে দিই ইসলামী শিক্ষা কাকে বলে’। ফলে এমন কোন গ্রাম আজ তুরস্কে নেই যেখানে আরবাকানদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল নেই এবং মানের দিক দিয়ে সেগুলো সব চেয়ে ভাল স্কুল। সেখান থেকে পাস করে অন্ততঃ ইসলাম বিদ্বেষী কেউ হচ্ছে না। মীর কাসেম আলীরা হয়তো সেই কৌশলই নেয়া শুরু করেছিলেন। গতানুগতিক ধর্মীয় ওয়াজের বিপরীতে সর্বস্তরের মানুষের বোধগম্য ভাষায় কুরআনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার কার্যকর পন্থা নিয়েছিলেন মাওলানা সাঈদী।
তিনিও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের হাতে আটক। ব্যবসা-বাণিজ্যকে ইসলামীকরণের ব্যাতিক্রমী পন্থায় কাজ শুরু করেছিলেন মীর কাসেম আলী। এখন তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার নামের নাটকে শিকার তিনিও। অনেক কুসংস্কারের বিপরীতে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে মৌলিক ইসলামের আলো ছড়ানোর পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। তিনিও প্রতিহিংসার শিকার। আর বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির দিকপালদের তো কারাগারে ঢুকানো হয়েছেই। যাদের আটক করা হয়েছে তারা সবাই বিদেশে চাইলে খুব ভাল ভাবেই উন্নত জীবন যাপন করতে পারতেন। কিন্তু ওই যে ইসলামী বিপ্লবের চেতনা রক্তে ঢুকে গিয়েছে সেই চেতনা তাদের দেশ ত্যাগ করতে দেয়নি। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা তাদের চুড়ান্ত আঘাত হানা শুরু করেছে। এ অবস্থায় কি আলোর পথে চলা বন্ধ হয়ে যাবে? না বন্ধ হতে পারেনা। বিভিন্ন দেশে এসব কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই বিজয় এসেছে। এখানেও আসবে…ইনশাল্লাহ।
আওয়ামী লীগ গোটা জাতিকে বিভেদ, হিংসা আর অ-মানবিকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। সমাজে আজ গণহত্যাকারী, খুনী, কোটি-কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারী, সশস্ত্র সন্ত্রাসী, দূর্নীতিবাজ, লম্পট, চরিত্রহীনরা যেন সাধু! আর নিরাপরাধীদেরকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে মিডিয়া ট্রায়াল আর বিকৃত উপস্থাপনার মাধ্যমে বানানো হচ্ছে মানবতা বিরোধী! গোয়েবলসীয় সূত্রের আলোকে চলছে সত্যপন্থীদের বিরুদ্ধে এই অসত্য প্রচারণা। আসলে এর শেষ কোথায়?
জনাব মীর কাসেম আলীকে নিয়ে একশ্রেনীর গাঁজাখুরী গল্পের যেন শেষ নেই। এবার দেখুন তাঁর সাথে দীর্ঘ সময় কারাগারে একসাথে অবস্থান কারী আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি তাঁর সর্ম্পকে কি লিখেছেন!! জনাব রনি- মীর কাসেম আলীর মন খারাপ! শিরোনামে ৫ নভেম্বর ২০১৪, দৈনিক নয়াদিগন্তে লিখেছেন-“জেলখানার অন্ড অবসরে আমি প্রায়ই হাঁপিয়ে উঠতাম। মীর কাসেম তখন পরম স্নেহে আমাকে তার রুমে ডেকে নিতেন নতুবা আমার রুমে আসতেন। তিনি কথা বলতেন কম এবং শুনতেন খুব বেশি। তিনি আমার জীবন, দর্শন, রাজনীতি, ধর্ম, প্রেম-ভালোবাসা, সমাজ, সংসার, নির্বাচনী এলাকার খুঁটিনাটি নিয়ে মেধাদীপ্ত প্রশ্ন করতেন এবং সব কিছু শোনার পর সুন্দর বা আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি বলেই ক্ষান্ত থাকতেন। কয়েক দিন পর আমি বুঝলাম মীর কাসেম সমাজের অন্য মানুষের মতো নন। এ আমি বুঝেছিলাম তার আচার-আচরণ, চালচলন, কথাবার্তা, খাদ্যাভ্যাস ও ইবাদত বন্দেগীর ধরন দেখে। যেসব বিষয়ে আমার মনে প্রশ্ন জাগত, আমি নির্দ্বিধায় সেগুলো তাকে জিজ্ঞেস করতাম এবং তিনি সাধ্য মতো সুন্দর করে আমাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলতেন।
জেলে যাওয়ার আগে বহুজনের কাছে বহুবার তার ব্যাপারে বহু কথা শুনেছি। তার নাকি আছে হাজার হাজার কোটি টাকা। তিনি জামায়াতের প্রধান অর্থ যোগানদাতা, দেশে-বিদেশে তার রয়েছে নামে বেনামে বহু প্রতিষ্ঠান। দেশের মধ্যে চলাফেরার জন্য তিনি সব সময় নাকি নিজস্ব হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন ইত্যাদি। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় গুজবটি হলো- তিনি নাকি যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিলেন। আমি এসব গাঁজাখুরি গল্প বিশ্বাস করতাম না। আবার যারা ওসব বলত তাদের সাথে তর্কও করতাম না। কারণ, গুজবকারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্তর এত নিচু মানের যে, তাদের সাথে তর্ক করাটাই মস্তবড় এক নির্বুদ্ধিতা।
মার্কিন রাজনীতি, অর্থনীতি ও লবিস্ট ফার্ম সম্পর্কে আমার ধারণা বাংলাদেশের অনেকের চেয়ে স্পষ্ট। কারণ ওই বিষয়ের ওপর আমার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফেলোশিপ রয়েছে। ওখানকার লবিস্ট ফার্মগুলো কী কী কাজ করে বা করতে পারে তা আগে জানতে হবে।
আমি মীর কাসেমের কথা শুনছিলাম এবং তার রুমের চার দিকে চোখ বুলাচ্ছিলাম। জামা-কাপড়, সাজসজ্জা, আসবাবপত্র কোনো কিছুই আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়নি, বিশেষ করে ডিভিশনপ্রাপ্ত অন্য কয়েদিদের তুলনায়। আমরা সবাই জেলখানার ভেতরের দোকান থেকে কিনে মিনারেল ওয়াটার খেতাম। অন্য দিকে মীর কাসেম খেতেন সাধারণ ট্যাবের পানি। কোনো বিদেশী ফলমূল খেতেন না। জাম্বুরা, আনারস, আমড়া, কলা প্রভৃতি দেশী ফল সময় ও সুযোগ মতো খেতেন। আমাদের সবার রুমে ছয়টি করে সিলিং ফ্যান ছিল। আমরা নিজেরা সব সময় সব ফ্যান ছেড়ে রাখতাম। মীর কাসেম ভুলেও সে কাজটি করতেন না- দরকার পড়লে একটি মাত্র ফ্যান ছাড়তেন।
একদিন রশিকতার একপর্যায়ে তিনি “আমার কথা শুনে তিনি শিশুর মতো হো হো হেসে উঠলেন। তারপর হাসতে হাসতে আসমানের পানে তাকালেন এবং বললেন, এমপি সাহেব! সব ফয়সালা তো ওই আসমান থেকেই আসবে! আমার মুখের ওপর যেন বজ্রপাত হলো, বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি অনেকটা অমনোযোগী হওয়ার ভান করে এদিক-ওদিক তাকাতে থাকলাম; কিন্তু কিছুতেই নিজের দুর্বলতা গোপন রাখতে পারলাম না। আমি তার মুখপানে তাকালাম। আমার চোখ অস্বস্তিতে জ্বালাপোড়া করতে লাগল। আমি দু’হাতে মুখ ঢেকে চোখের যন্ত্রণা আড়াল করতে চেষ্টা করলাম। তিনি তখনো আকাশের পানে তাকিয়ে ছিলেন”।
জনাব মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদন্ড স্থগিত করতে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও আইন বিশেষজ্ঞদের আহ্বান অব্যাহত। দেশে-বিদেশে এই অন্যায় দন্ডের প্রতিবাদে ব্যক্তিদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ নিন্দা চলছে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদন্ডাদেশ রহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে মীর কাসেম আলীর পুনর্বিচারের আহ্বান জানানো হয়েছে। তার রিভিউ শুনানির আগে, তার ছেলে ও ডিফেন্স টিমের সদস্য ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেমকে আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্যাতন, বিনা বিচারে আটক ও জোরপূর্বক অপরহণবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞরা। এতে বলা হয়, মৃত্যুদ- প্রয়োগে সুষ্ঠু বিচার ও যথাযথ প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মান বজায় না রাখার অভিযোগ রয়েছে।
মীর কাসেম আলীর ছেলে ও তার ডিফেন্স টিমের আইনজীবী মীর আহমেদ বিন কাসেমকে গত ৯ আগস্ট তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘ বিশেষজ্ঞ দল। তাদের মতে, মীর কাসেম আলীর রিভিউ শুনানির দুই সপ্তাহ আগে কী সন্দেহ বা অভিযোগে, কাদের দ্বারা এবং কোথায় তার ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছে, এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। মীর আহমেদ বিন কাসেমের অবস্থান সম্পর্কে অবিলম্বে জানানোর জন্য জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিদাতা বিশেষজ্ঞরা হলেন, মিস এজেন্স চেল্লেমার্ড, মিস. মোনিকা পিন্টু, মি. জোয়ান ই. মিনডেজ, মি. সিটোনডিজেই রোল্যান্ড আডিজুভি।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টি অভিযোগ করে বলে, অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ কার্যক্রমের মাধ্যমে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তার আসন্ন ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে।‘বাংলাদেশ : হল্ট ইমিনেন্ট এক্সিকিউশন অব মীর কাসেম আলী আফটার আনফেয়ার ট্রায়াল’ শিরোনামে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
পাটেল বলেন, শুরু থেকেই বিচার প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু বিচার বিষয়টিকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। মৃত্যুদ- একটি নিষ্ঠুর ও অপূরণীয় শাস্তি। যা কেবল বিচার প্রক্রিয়ায় অবিচারের মিশ্রণ ঘটাবে। চম্পা বলেন, আন্তর্জাতিক গুম দিবসে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অবিলম্বে, পুঙ্খানুপুঙ্খ মীর আহমেদ কাসেম আলীর জোরপূর্বক গুমের তদন্ত করতে হবে।
মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদন্ড স্থগিতের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের ৩৫ জন এমপি। চিঠিতে তারা বলেন-“প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি), যা যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত যে কোন বিচার করবার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি দেশীয় আদালত, এর বিচার প্রক্রিয়ার বেআইনি দিকগুলো নিয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে আমরা আপনাকে লিখছি।
আমরা স্মরণ করছি, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গৃহীত একটি রেজ্যুলুশনে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, বিশেষ করে সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদন্ড থেকে অনেক দূরে থাকবার কারণে আইসিটি’র তীব্র সমালোচনা করা হয়েছিল। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, এই আদালত থেকে ইতোমধ্যে ১৭ জন ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচ জনের রায় কার্যকর করা হয়ে গিয়েছে।
জনাব মীর কাসেম আলী, যিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী’র একজন নেতা এবং মিথ্যা এবং রাজনৈতিক প্রভাবান্বিত প্রসিকিউশনের একজন ভিকটিম, তাকে ২০১৪ সালের ২রা নভেম্বর মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। অসংখ্য সূত্র বলছে, তার এই বিচারটি সকল আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতা এবং উন্মুক্ততার মানদন্ডে ব্যর্থ হয়েছে। জনাব আলীর এই বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও যথার্থ বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণের বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত হবার আগ পর্যন্ত এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর না করতে আমরা বাংলাদেশের সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আহবান জানাচ্ছি।
একই সাথে, জনাব মীর কাসেম আলীর পুত্র মীর আহমাদ বিন কাসেম, যিনি তার বাবার মামলার মূল কৌসুলীর ভূমিকা পালন করেন, আমরা তার কথিত অপহরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি”। (সুত্র: দৈনিক সংগ্রাম)
মুলত এর মাধ্যমে স্পষ্ট যে, জনাব মীর কাসেম আলীকে ন্যায় বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।” (৫৭:২৫) অন্যত্র বলা হয়েছে-“আল্লাাহ তা’আলা কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক নন?”(৯৫ঃ৮)
পৃথিবীর সকল নীতি-নৈতিকতা, মানবাধিকরি লংঘন করে ইতোপূর্বে জামায়াতের ৪ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। ২ জন কারাগারে ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কোন মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার ওপর আল্ল¬াহর গযব ও তাঁর লানত এবং আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।” (৪ ঃ ৯৩)
জনাব মীর কাসেম আলী যখন শাহাদাতের পদযাত্রী তখন তাঁর আদরের প্রিয় সন্তান ব্যারিষ্টার আরমান এখনো নিখোঁজ। গত ৯ আগস্ট দিবাগত রাত ১১টায় রাজধানীর মিরপুরের ডিওএইচএস এর বাসা হতে সাদা পোশাক পরিহিত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গ্রেফতার করেছে।
ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান) সুপ্রিম কোর্টের একজন নিয়মিত প্র্যাকটিশনার। তিনি লিংকস ইন থেকে ২০০৭ সালে ব্যারিস্টার সনদ অর্জন করেছেন। এর আগে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ২০০৫ সালে এলএলবি (অনার্স) পাস করেন। পড়াশুনা শেষে দেশে ফিরে ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান) একজন এডভোকেট হিসেবে ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর সনদপ্রাপ্ত হন। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন। খুব অল্প বয়সে একজন আইনজীবী হিসাবে মামলা পরিচালনায় তার মেধা, প্রজ্ঞা এবং দক্ষতা অনেককে হতবাক করেছে।
ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেমের মুক্তি দাবি করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। জনগণের নিরাপত্তা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এটি প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এটি নাগরিকের প্রতি কারো করুনা নয়। অথচ উদ্বিগ্ন পরিবার ও স্বজনরা থানায় গেলে তাদের মামলা গ্রহন না করা আইনি প্রতিকার পাওয়ার নাগরিক অধিকারের লংঘন নয় কি?
সর্বশেষ কাশিমপুর কারাগারে মীর কাসেম আলী সাথে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের মীর কাসেমের স্ত্রী আয়েশা খন্দকার বলেন- আমার এক ছেলেকে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। ছেলেকে খুঁজে পাওয়া গেলে তার সঙ্গে কথা বলে উনি (মীর কাসেম) সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে মীর কাসেম আলীর স্ত্রীর আবেদন অনেককে কাঁদিয়েছে। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন- “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যথাযথ সম্মানপূর্বক নিবেদন,‘আমি এক অসহায় মা। মীর কাসেমের মৃত্যুদ- বহাল থাকায় আপনার নিকট আমার এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আরজ এই যে আমার পরিবারে কোন পুরুষ লোক নেই। আমার সন্তান ছোট ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান) এবং তার বাবা আমাদের পরিবারের যাবতীয় কাজ করত। তার অবর্তমানে আমরা খুবই অসহায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ৯ই আগস্ট সাদা পোশাকে উঠিয়ে নেয়ার পরে আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাইনি।
জনাব প্রধানমন্ত্রী, আমি স্বামীর এই শেষ মুহুর্তে তাকে অবশ্যই আমাদের মাঝে পেতে চাই। তাকে ছাড়া আমাদের কোন কাজই করতে পারা সম্ভব নয়। যেকোন ভাবেই হোক মানবীয়ভাবে এবং বাস্তব প্রয়োজনেই আমাদের কাছে আরমানকে ফিরিয়ে দিন”।
মানবতার কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ জনাব মীর কাসেম আলী দেশবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তাঁর কর্মের মাধ্যমে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রেখেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা। তিনি ছিলেন দূর্নীতিমুক্ত ও ইনাসফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের সংগ্রামে অগ্রসেনানী। যারা সারা জীবন মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে আহবান করেছেন। একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী, কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর সততা, দক্ষতা দেশপ্রেমের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করবে। মানুষের হৃদয় থেকে এই মহান সংগ্রামী প্রাণপুরুষদের মুছে ফেলা যাবেনা।
আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা, “এরা তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহর ফয়সালা হলো তিনি তার নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন। কাফেররা তা যতই অপছন্দ করুক না কেন।” (সফ- ৮) তারা ইসলামী নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে ইসলামী আন্দোলনকে দমন করতে চায়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী জুলুম-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে ইসলামী আদর্শবাদী আন্দোলন কিংবা তার অনুসারীদেরকে দমানো যায় না। বরঞ্চ নির্যাতন-নিপীড়নের ফলে আন্দোলনের কর্মীদের ঈমান আরো মজবুত হয় এবং আন্দোলন আরো বেগবান ও তীব্র গতি পায়।
আওয়ামীলীগ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার দিনক্ষণ ঠিক করে উল্লাস করছে। কিন্তু মানুষ খেকো, রক্তপিপাসুদের এই উল্লাস ক্ষণস্থায়ী। জালেমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে হত্যা করে নিজেদের ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নিচ্ছে। আর শহীদরা মহান জান্নাতে আল্লাহর মেহমান হিসেবে মর্যাদা লাভ করবে। সেদিন বেশী দুরে নয় তাদের রক্তের বিনিময়ে এ জমিনে ইসলামের বিজয় হবেই ইনশাল্লাহ।
হে! আরশের মালিক, তুমিই আমাদের জন্ম-মৃত্যু নির্ধারণ কর। কিন্তু জালেমরা মৃত্যুর দিনক্ষন ঠিক করে উল্লাস করছে! ক্ষমতার দাপটে তার আজ বেপরোয়া! ও দিশেহারা। হে! পরওয়ারদেগার, তুমি তোমার প্রিয় গোলামদের হেফাজত কর। তোমার প্রিয় বান্দাদের প্রতি করুণা ও রহমত বর্ষন কর। আমাদের প্রিয় নেতাদেরকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দাও। হে! আল্লাহ তুমি আমাদের অশ্রুসিদ্ধ ফরিয়াদ কবুল কর। আমীন।।