বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, জনগণের কথা বলার অধিকার নেই, এমনকি মানুষের জান ও মালেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। সরকার তার সামগ্রিক ব্যর্থতায় দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা) প্রদর্শিত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ইসলাম। শুধুমাত্র ইসলামই জনগণকে তার প্রকৃত নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এমতাবস্থায় দেশের মানুষের মুক্তির জন্য ইসলামের সু-মহান আদর্শের ভিত্তিতে একটি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি জামায়াতের সদস্যদের (রুকন) উদ্দেশ্যে বলেন, নিজেদেরকে প্রাক্টিসিং মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য জনগণের নিকট উপস্থাপন করতে হবে। রাসুলের সিরাত থেকে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সাহাবায়ে আজমাইনের মতো আন্দোলনে আরও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য বিনয়ী হতে হবে, মানুষকে সম্মান করতে হবে। পরিবার ও সমাজে ব্যপকভাবে সালামের প্রচলন ঘটাতে হবে। সবাইকে আগে সালাম দেওয়া অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। বিরোধী দল-মত সহ সকল মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কাজে প্রতিযোগিতা করে অর্থ সম্পদ দান করতে হবে। নিজেদের সম্পদের একটি অংশ দ্বীনের জন্য অসিয়ত করে আখেরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। জামায়াতের প্রত্যেক সদস্যকে (রোকন) ঋণ মুক্ত জীবনযাপন করতে হবে। আত্মীয় ও প্রতিবেশীর হক যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। মানুষের বিপদে আপদে পাশে থেকে মানবতার সেবা করতে হবে। সেইসাথে সৎ কাজের আদেশ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভুমিকা পালন করতে হবে। কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে সর্বোত্তম জিহাদ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আজ ৩ ফেব্রুয়ারী জুমাবার অনলাইন প্লাটফর্ম জুম ও ইউটিউবে অনুষ্ঠিত সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সদস্য (রুকন) সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহা. দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান জনগণের ন্যায্য দাবি আদায়ের ১০ দফা ঘোষণার পর জুলুমের শিকার হয়ে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। অবিলম্বে আমরা তার মুক্তির দাবি করছি। রাজনৈতিক যেকোনো নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বাঁধা প্রদান, নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে পুলিশের বর্বরোচিত নির্যাতন ও হাত-পা ভেঙ্গে ফেলার ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতন চালানো তাদের কাজ নয়। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সমূহকে অমানবিক আচরণ পরিহার করে সংবিধানের আলোকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহবান জানাচ্ছি। জামায়াত সবসময় জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, নির্যাতন ও হত্যার ভয় দেখিয়ে জামায়াতকে দমিয়ে রাখা যাবে না। একইসাথে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকেও বন্ধ করা যাবেনা। তিনি নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই জুলুমবাজ সরকারকে বিদায় জানাতে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য সকলের প্রতি উদাত্ব আহবান জানান।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন হিসেবে আল্লাহর জমীনে তাঁরই দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টায় জামায়াতের শপথের জনশক্তি রুকনদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তিদের মজবুত ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে জাহেলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য ইলমী যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আল্লাহর গোলাম হিসেবে জান্নাতের প্রত্যাশায় আমলী জিন্দেগি উন্নততর করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমরা আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করছি। যে কাজ করেছিলেন আল্লাহ তাআলার প্রেরিত সকল নবী-রাসূল। এ দায়িত্বটা আমাদের পালন করতে হবে সুসংগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে।বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুধাবন করে দেশে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে হবে। ভৌগোলিক পরিমণ্ডল ও পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহের পরিকল্পনা বুঝে দেশের ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অটুট রাখার স্বার্থে যৌক্তিক বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতের সকল জনশক্তিকে দাওয়াতি কাজ বাড়াতে হবে। তালিমুল কুরআনের মাধ্যমে সমাজের সকল মানুষের কাছে কোরআনের শিক্ষা পৌছে দিতে হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরও তৎপর হতে হবে। নিয়মিত অধ্যয়নের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন ও অন্তরের খোরাক যোগাতে হবে। সমাজের সকল সেক্টরে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ লোক তৈরী করতে হবে। জামায়াত কর্মী মানেই সমাজকর্মী ফলে সামাজিক কাজের মাধ্যমে মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। সামাজিক নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে। সার্বিকভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাহায্য কামনা করতে হবে। বর্তমানে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি এক গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এই ক্রান্তিকালে দেশের ও জাতির প্রয়োজনে সকল আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াতের রুকনদেরকে সম্মুখে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ব্যক্তিগত পরিকল্পনার আলোকে টার্গেট নির্ধারণ করে পরিকল্পিত জীবন অতিবাহিত করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা) ও সাহাবী আজমাইনের মতো পরিকল্পিত ও টার্গেট ভিত্তিক ইসলামের আদর্শিক দাওয়াত সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। প্রত্যেকের মনোজগতে চিন্তার বিপ্লব সৃষ্টি করতে হবে। ইখলাস ও সালাতের মাধ্যমে নিজের আমলের পরিশুদ্ধতা আনতে হবে। জামায়াতের সদস্য (রোকন) হিসেবে সমাজের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ব্যাক্তি হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে হবে।