বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি, বাউফলের গণমানুষের নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ গত জুম্মাবার বাউফলে স্থানীয় দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, মহান আল্লাহর আনুগত্যের বাহিরে এক মূহুর্ত কোনো সৃষ্টির যাওয়ার সুযোগ নেই। সূর্য-নক্ষত্র থেকে শুরু করে এজাতীয় কোনো আল্লাহর সৃষ্টি যদি এক সেকেন্ডের জন্য কিছু ব্যতিক্রম ঘটে তাহলে মহাপ্রলয় সংঘটিত হয়ে যাবে। দায়িত্বশীল ভাইদেরকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে, আনুগত্যের সীমা এতটুকু লঙ্ঘন করে আমি যেন জীবনযাপনের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিন্ষ্ট করে না দেই। আপনার আনুগত্যের শৃঙ্খলায় সামান্য ত্রুটি হলে শুধু সংগঠনই নয় স্বাভাবিক জীবন যাত্রাও ব্যহত হবে। কারণ এই নিখুঁত পরিকল্পনা মহান আল্লাহ নিজে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা তার পরিকল্পনার মাঝে আছি বলেই সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি, আলহামদুলিল্লাহ। তাই আপনারা লক্ষ্য করবেন, প্রচলিত আইনের শাসন ও সাংবিধানিক সীমী অতিক্রম করে প্রশাসনের অতি উৎসাহি কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে বিনা ওয়ারেন্টে মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় জামায়াত নেতাকর্মীসহ নিরিহ সাধারণ ব্যবসায়ি, চাকুরীজীবী, শিক্ষকদের বাসা-বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তিতে এসব গ্রেফতারকৃতদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী আদালতে না নিয়ে অন্যত্র রেখে অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদেরকে সাথে নিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক অভিযানে বের হয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের হয়রানি করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের উপরে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। যা আইনের শাসন ও মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। পুলিশের কতিপয় চিহ্নিত কর্তা ব্যক্তিরা গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতাকর্মীদের রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা দাবি করার অভিযোগ করছে ভুক্তভোগী পরিবার গুলো। তাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের চরম ঊদ্ধত আচরণের শামিল। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন সরকার দমন-পিড়নের পথ বেছে নিয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন বর্তমান আওয়ামী সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘায়িত করতে দেশের জনগণের উপরে জুলুম-নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাউফল উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ও বাউফল উপজেলা আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে দায়িত্বশীল সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পটুয়াখালী জেলার আমীর অধ্যাপক শাহ আলম, বাউফল উপজেলা সেক্রেটারি খালিদুর রহমানসহ প্রমূখ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সবকিছু মহান আল্লাহর পরিকল্পনার অধীনে আছে। এই সূর্য তার পরিকল্পনার অধীনে উদিত হয়, এই পৃথিবীর মাটি কোনো ব্যক্তির নিয়মে চলে না, ভূমিও ঐ মহান রবের পরিকল্পনায় আমার আপনার পায়ের নিচে স্থির আছে। এটা মহান আল্লাহ তায়ালা একটা আনুগত্য নিয়মের অধীনে রেখেছেন। যে আল্লাহ আলো, বাতাস, অক্সিজেন দিয়ে আমাকে আপনাকে একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী চলার সুযোগ দিয়েছেন। অথচ কেমন করে সেই মহান আল্লাহর আনুগত্য পালনে আমরা যখন বরখেলাফ করি, আনুগত্যের বিধান পালনে আমি দুর্বলতা প্রকাশ করি, অজুহাত দেখাই-যুক্তি প্রদর্শন করি। তখন আমাকে বুঝতে হবে, পুরো পৃথিবীটা যেমন আনুগত্যের বাহিরে গেলে ধ্বংস হয়ে যায়, অনুরূপ আমি আনুগত্যের বাহিরে গেলে আমার ঈমান চলে যায়। আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব আমার উপর থেকে সরে যায়। সেজন্য দায়িত্বশীল হিসেবে আমাকে আপনাকে আনুগত্যের বিধান পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে। সকল পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। তাহলেই আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে বিরাজমান সংকট এবং ক্রান্তিকালের উত্তরণ ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, বাউফলের জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আগামী দিনে একটি সুখি সমৃদ্ধ জনপদ গড়তে চাই। আজকে আমাদের উপরে জেল-জুলুম-নিপিড়ন আছে। যারা ক্ষমতায় আছেন তারা ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন। তাদেরও দিন শেষে সূর্য অস্ত যাওয়ার মতো পরিস্থিতি আসবে। তখন এই জনগণের আদালতে আপনাদেরও সঠিক বিচার হবে। সেই রাতের অন্ধকারে আপনাদের কি পরিস্থিতি হতে পারে তাও স্মরণে রাখুন। মহান আল্লাহর বিধান এমনই, উত্থান-পতন দিয়েই তিনি সকল পরিকল্পনা সাঁজিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ দেখে নিতে চান, এই পরিস্থিতির মধ্যেও কারা ঈমান দেশপ্রেমের চেতনায় মজবুতভাবে টিকে থাকে। তিনি নতুন বছরের শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ময়দানে সম্মুখে থেকে জুলুম নিপিড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে জীবনবাজি রেখে কাজ করার আহ্বান জানান।