বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ ও নির্মমভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে দেশকে জুলুমতন্ত্রে পরিণত করেছে। গণতান্ত্রিক এদেশে জনগণকে এখন আর ভোট প্রদানের কোনো সুযোগই দেওয়া হয় না। দেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত, জনগণের কথা বলার নূন্যতম অধিকার নেই, এমনকি মানুষের জান ও মালেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। এমতাবস্থায় দেশের মানুষের মুক্তির জন্য জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীলদের বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করতে হবে। সৎ কাজের আদেশ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে সর্বোত্তম জিহাদ। এটি কুরআনের নির্দেশ। জনগণকে সাথে নিয়ে জালিমের জুলুমকে প্রতিহত করতে হবে। অবৈধ ও জালিম আওয়ামী সরকারকে প্রতিহত করতে হলে রাজধানী ঢাকার জনগণকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পতন নিশ্চিত করতে এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবীতে ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন ঝাপিয়ে পড়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বার্ষিক পরিকল্পনার ওরিয়েন্টেশন এবং থানা ও বিভাগীয় দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আনলাইনে মাধ্যম জুমে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর যথাক্রমে আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহা. দেলাওয়ার হোসেন ও ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা) প্রদর্শিত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হচ্ছে ইসলাম। শুধুমাত্র ইসলামই জনগণকে তার প্রকৃত নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এজন্য পরিকল্পিতভাবে দাওয়াতী কাজ করার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সকল মানুষের কাছে ইসলামী অনুশাসনের আহবান পৌছিয়ে দিতে হবে। সংগঠনের দেওয়া পরিকল্পনা ভালোভাবে পড়ে বুঝে সেই মাফিক ময়দান পরিচালনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ ভালোভাবে করা যায় না। এদেশের মানুষের মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। একইসাথে জামায়াত সবসময় জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, নির্যাতন ও হত্যার ভয় দেখিয়ে জামায়াতকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আগামী দিনে যেকোনো নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে সকল বাঁধা উপক্ষো করে অগ্রসর হতে হবে। সেইসাথে জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীলদের সমাজের মানুষের বিপদে আপদে পাশে থেকে মানবতার সেবা করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চরম ইসলাম বিদ্বেষী দল। তারা যেমন তাদের দলের নাম থেকে মুসলিম ছেটে ফেলে ধর্মনিরপেক্ষ সেজেছে, তেমনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সাহিত্য সংস্কৃতি থেকেও ইসলামী নীতি-আদর্শ বাদ দিয়ে পৌত্তলিকতা সংযুক্ত করেছে। একইভাবে রাজনীতি থেকেও ইসলাম তথা আদর্শিক ভাবধারা নিশ্চিহ্ন করতে সম্পূর্ণ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে জামায়াতের উপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে। এই ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী সরকারের এমন অনৈতিকতার জবাব আমরা রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই দিবো। জাতিকে দুঃশাসনের কবল থেকে মুক্ত করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশ আজ গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। এই ক্রান্তিকালে দেশ ও জাতির প্রয়োজনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের জামায়াত নেতৃবৃন্দকে সম্মুখে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাজের সকল সেক্টরে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ লোক তৈরী করতে হবে। জামায়াত কর্মী মানেই সমাজকর্মী ফলে সামাজিক কাজের মাধ্যমে মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। সামাজিক নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে। তালিমুল কুরআনের মাধ্যমে সমাজের সকল মানুষের কাছে কোরআনের শিক্ষাকে তুলে ধরতে হবে। সংগঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দায়িত্বশীলদের আরও তৎপর হতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাহায্য কামনা করতে হবে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস চলছে, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের জনগণ তাদের অধিকার আদায়ে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় ও জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সর্বোচ্চ ভুমিকা পালনের জন্য দায়িত্বশীলদের প্রতি উদাত্ব আহবান জানান।